HAPPY READING...


Tuesday, 22 November 2016

রূপকথা (নয়) ময়


(প্রথমেই বলে রাখি, লেখাটি আমার একার সৃষ্টি নয়…ভাবনাটিও এক মগজের হাবিজাবি চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ নয়। এটি আমার এবং শ্রুতির মিলিত প্রয়াস)

“কত আর রাত হবে, বেশি নয়…টেবিল ঘড়ির ছোটো কাঁটাটি ১-এর দাগে এবং বড় কাঁটাটা ১২-এর ঘর ছুঁই ছুঁই। না! কিছুতেই একটাও শব্দ উগরাতে পারলাম না, স্তব্ধ ডিজিটাল পান্ডুলিপি!”

ধুস! দরজাটা বোধ হয় খোলা থেকে গেল…হাঁটতে থাকলাম বড় রাস্তার ধার ঘেঁষে, কিছুই খেয়াল ছিলনা তেমন। ইশ! এখন মনে হচ্ছে একটা স্টোল নিলেও ভালো হত। বাড়িতে পড়া শর্টস আর ট্যাঙ্ক টপটাও পালটানো হয়নি। আগামীকালের ভেতর লেখাটা ওদের পাঠাতে না পারলে…বিরক্তি গিজগিজ করছিল মাথার ভেতর। ওদিকে ভাড়া বাকি মাস দু’য়েকের।

চারদেওয়ালের ওই কামরাটার দমবন্ধ অ্যাটস্মোফিয়ার থেকে পালাতেই বেরিয়ে আসা। রাস্তাটা বেশ ফাঁকা, এই ভালো লাগছে। অনুভূতির কোশগুলো একটা ঠান্ডা হাওয়ার আঁচ পাওয়ায় মন অনেকটা হাল্কা হয়ে গেল। হাতের তালুগুলোও ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে আমার। হাল্কা কুয়াশা ও স্ট্রিট লাইটের আলো রিয়েলিটিতে দিয়েছে একটা ম্যাজিকাল টাচ।
নিজের মনে হেঁটে চলেছি এখনো, সময়ের খেয়াল নেই। হঠাতই চোখে পড়ল সামনের ক্রসিং-এ কয়েকজন ছেলে…রাতের আড্ডায় মসগুল। ঘ্রাণেন্দ্রিয় এক চেনা গন্ধ পায়, বোধহ্য় অ্যালকোহল! “কি হল দিদি কোনো হেল্প লাগবে?” ওদের মধ্যে থেকেই জিজ্ঞেস করল একজন।

…এখন আমি আবার ঐ ‘এক কামরা’-এর অভিমুখী। ওদের সাথে কথা বলে বেশ হাল্কা হয়ে গেলাম…চিন্তারাও তেমন আমল পাচ্ছেনা। না! মনে হচ্ছে ফিরে লিখে ফেলতেই পারব নতুন কিছু, চাকরিটাও থেকে যাবে”।
এইবার আপনারাই একটা প্রশ্নের উত্তর দিন তো, ঘটনাটি বাস্তব না রূপকথা?

Tuesday, 1 November 2016

আনন্দ এবং ভয় পাশাপাশি হাঁটেনা

আমার বাড়িটা ঠিক শহরে নয়,শহর থেকে একটু ভেতরে বলা যায় শহর ঘেঁষা। অনেকদিন এরকম হয়েছে রাত করে বাড়ি ফিরেছি টিউশন থেকে বা রিলেটিভস-এর বাড়ি থেকে একা ফিরেছি। ১১টাতেও আমার শহরতলিতে মানুষজন জমজমাট করে। সেইসব চেনা মানুষদের ভিড়ে হাঁপিয়ে উঠলেও কখনো মনে হয়নি এই ভিড়ে এই শহরতলির রাস্তা, অলি গলি আনসেফ। একমুহূর্তের জন্য রাতবিরেতে একা বাড়ি ফিরতে ভয় পাইনি। দোকান,অটোর ভিড়,অযাচিত জ্যাম, না মানা ট্রাফিক সিগন্যাল, অত্যাধিক ভিড়, অটোর লাইন এসবই আমার শহরতলির চেনা দিক, একটা সেফ জোন।
আজ ভাইফোঁটা উপলক্ষে সকাল সকালই রিলেটিভের বাড়ি যাই, সেখানে নিজের মানুষদের মধ্যে থেকে বাড়ির বাইরের রাস্তাঘাটে কি ঘটছে সেই সম্বন্ধে সত্যিই আঁচ করা যায়না! বেরোতে বেরোতে খানিক রাত হয়ে গেল ওখান থেকে, রাতের কাঁটা সাড়ে দশটা পার করেছে। বাবার সাথে পাশাপাশি হেঁটে ফেরার সময়,টাইম সেভ করার জন্য মেনরোডের বদলে ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা বেছে নিই। একটু এগোতেই বুঝতে পারি, বাতাস আস্তে আস্তে ভারি হচ্ছে কোনো নেশাবস্তুর তীব্র ধোঁয়ায়, কষ্ট হতে থাকে। শ্বাসকষ্ট, কিংবা একটা ভয়। সামনে এগোতেই দেখি, কয়েকজন ছেলে গান চালিয়ে রাস্তা ঘিরে উদ্দাম নৃত্য জুড়েছে, সাউন্ড বক্সে বাজছে "বেবি কো বেস পসন্দ হে", আর বাতাসে বইছিল না প্রেম নয়...অ্যালকোহলের গন্ধ! ওরা আমাদের যাওয়ার জন্য রাস্তা ছাড়েনি, আমরাই খুব কষ্ট করে পাশ কাটিয়ে এলাম। তাকিয়ে থাকা চোখগুলো এড়াতে আমি চোখ আটকে রাখলাম মোবাইল স্ক্রিনে। হেঁটে আসা যাবত সম্পূর্ণ রাস্তায় কোনো জন মনিষ্যি দেখতে পেলাম না। বাবাকে বললাম, স্টেশন ও থানা চত্তরে হয়তো ব্যাপারটা সেফ হবে। জানিনা মনের ভুল কি,কিংবা আমার ঘ্রাণেন্দ্রিয়র গাফিলতি... থানার পাশ কাটানোর সময় সেই গন্ধটা আরো তীব্র ভাবে নাকে ঠেকল। সৌভাগ্যবশত অটো পেয়েছিলাম আমরা। ফেরার রাস্তায় দেখলাম আরো কিছু জায়গায় সেই উঠতি নাচুনেদের উদ্দাম নৃত্য, মেয়ে দেখলে টিটকিরি, আর মদ খেয়ে সামলাতে না পারার নজির। নিজের থেকে বয়সে অনেক ছোটো একজন ছেলেকে দেখলাম রাস্তায় পড়ে আছে বেহুঁশ হয়ে, তার সাইকেল মাঝরাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। কিছুদূর আসার পর আবার এক ঝামেলা! কি আর করা যাবে,মোটামুটি এই বছরের মত তো বাঙালির তেরো পার্বনের ইতি,তাই সেলিব্রেশনের জেরটা এই অবধি গড়াতেই পারে! ক্ষতি কি? তাতে কার পথ চলতে অসুবিধা হল, আর কে আজ তার ২০ বছরের জীবনে নিজের শহরতলিতে প্রথমবারের জন্য আনসেফ ফিল করল,সেই নিয়ে কারোর মাথা ঘামানোর কথা নয়!যাক গে, আমার চেনা শহরতলির এই অচেনাদিকটা জানার প্রয়োজন ছিল বেশ। অন্তত নিজকে সেফ দাবি করার আগে উৎসবের এই শেষ রাতটার কথা মনে করব।
মা এসব শুনে বলে, এইভাবেই দেশটা অধঃপতনে যাচ্ছে! আমি মনে মনে ভাবি এর জন্য কারা দায়ী? মা বলে পুলিশ কি করছিল রাস্তাঘাটের এই অবস্থা, আমি হাসলাম। মনে মনে ভাবলাম যা করে! মারছিল...মানে মাছি আর কি!

ছবি সৌজন্যে : গুগল

Saturday, 15 October 2016

অলক্ষী কথা

বিকেলে পুজোর সময় ঠাম্মার হাত থেকে প্রায় পাচাঁলিটা একপ্রকার কেড়ে নিয়েই বললাম, দেখি দেখি আমিই পড়ব! কি তোমরা সুর সুর করে করে পড়, আমাকে দাও দেখি! তার একটু আগেই পুজোর যোগাড় করতে করতে নারীস্বাধীনতা নিয়ে খুব ভাষণ দিয়েছি! মানে ‘লক্ষী’ মেয়ে কারে কয় আর কি! যাই হোক, পাঁচালি তো বেশ সুর করে পড়া শুরু করলাম, জীবনে প্রথমবার…বেশ উৎসাহ নিয়ে পড়া শুরু করলাম:
“ দোল পূর্ণিমা নিশি নির্ম্মল আকাশ।
ধীরে ধীরে বহিতাছে মলয় বাতাস।।
লক্ষীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ।
কহিতেছে নানা কথা সুখে আলাপন।।”
আমারও উৎসাহ তুঙ্গে, এই তো কি সাদামাটা বাংলা ভাষায় লেখা! ফুরফুরে লাগছিল ভেতরটা! কিছুটা পড়ার পরই ব্যপারখানা যতটা আন্দাজ করতে পারলাম,

অনেকটা  এরকম, নারদমুনি ‘লক্ষী মাতা’-কে জিজ্ঞেস করছেনঃ
“বল বল বল দেবী কি পাপের ফলে।
ভীষণ দুর্ভিক্ষ সদা মর্ত্ত্যবাসী জ্বলে।।”
উত্তরটা কি হবে সেই নিয়ে কোনোরকম ধারণা আমার ছিলনা। বৃহস্পতিবার সন্ধেতে বাড়ি থাকলে ঠাম্মাকে পড়তে শুনি, ঠাকুরঘর থেকে প্রত্যেক স্পষ্ট শব্দ আমার ঘর অবধি এসে পৌছায়না, ওই সুরটুকুই শুনি। মনে আছে অনেকদিন আগে লক্ষী পাঁচালি নিয়ে একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম, লিখেছিল লক্ষী পাঁচালি অষ্টাদশ উনবিংশ শতকের বাঙালি মহিলাদের একপ্রকার ব্রেনওয়াশের টাইপ! লক্ষীপাঁচালিতে নারদ মুনির প্রতি লক্ষীদেবীর উত্তর তা সত্যি করে তোলে। পৃথীবতে দুর্যোগের কারণ হিসেবে লক্ষীদেবী উল্লেখ করেছেন,
“লজ্জা আদি গুণ যত নারীর ভূষণ।
শরীরের হতে তারা করেছে বর্জ্জন।।
অতিথি দেখিলে তারা কষ্ট পায় মনে।
স্বামীর অগ্রেতে খায় যত নারীগণে।।
পতিরে করিছে হেলা না শুনে বচন।
ছাড়িয়াছে গৃহস্থলী ছেড়েছে রন্ধন।।
পুরুষের পরিহাসে কাটায় সময়।
মিথ্যা ছাড়া সত্য কথা কভু নাহি কয়।।’’
এতদূর পড়ার পর ঠাম্মা হাতটা চেপে বলল, আর হাসতে হবেনা! নে এতটাই পড়…আর শেষ প্রণাম মন্ত্রটুকু পড়ে নে!
লক্ষীদেবীর এরকম কথা শুনে আমি প্রথমে ভাবছিলাম দেবী বোধ হয় সামান্য জেলাস! কিংবা জেলাস সেজন যিনি নিজের মনের মধ্যেকার কথাগুলোকে লক্ষীদেবীর লিপে টুক করে সেট করে দিয়েছেন। প্রতি বৃহস্পতিবারের সন্ধেতে লক্ষীদেবীর এই কথাগুলো যাতে ‘নরম মন’-এ ম্যাজিক বুলেটের মত গেঁথে যায়! ‘লক্ষী’ মেয়ের একটা বাঁধা ধরা স্ট্রাকচার, হ্যাঁ ফেমাস বাংলা মেগা সিরিয়ালগুলোয় যে ধরণের ‘লক্ষী মেয়ে’-কে ফলো করা হয়। যাক গে, এই স্ট্রাকচারকে ভেঙ্গেচুরে নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়েছে ‘অলক্ষী’রা। পলক, মিনাল –এর মত আরো অনেকেই...যাঁরা অনেক আগেই ‘অলক্ষী’ হওয়ার সাহস দেখিয়েছেন। তাঁদের ফলো করছি আমরা, যাঁরা জেন্ডার ইকুয়ালিটিতে বিশ্বাস করি, স্বাধীন জীবন-যাপনে...নিজের মত বাঁচতে ভালোবাসি। আমাদের কাছে ‘লক্ষী’ মেয়ের স্ট্রাকচারটা একদম আলাদা, তাই লক্ষী পাঁচালির শব্দগুলোও। আমরা জোরে হাসি, জোরে কথা বলি... ‘লক্ষী মেয়ে’ নয় একজন ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি। ‘অলক্ষী’ হওয়ার পদক্ষেপটা অনেকটা বেশি সাহসের, অন্তত ‘লক্ষী’ মেয়ে হওয়ার চেয়ে অনেক মজার!

ছবি সৌজন্যে : গুগল

Sunday, 25 September 2016

পিঙ্ক : একটি প্রতিবাদী শব্দ

পরিচালক- অনিরূদ্ধ রায় চৌধুরী
সিনেমাটোগ্রাফিঅভীক মুখোপাধ্যায়
এডিটরবোধাদিত্য ব্যানার্জী
কাস্টিংতাপসী পান্নু, অমিতাভ বচ্চন, কৃতি কুলহারি, Andrea Tariang এবং অন্যান্য

১) হাসীনা। ২০ এপ্রিল, ১৯৯৯
২) লক্সমী। ২০০৫
৩) অন্নু মুখার্জী। ১৯ ডিসেম্বর,২০০৪
৪) মীণা সোনি। ২০০৪
 ভারতের অন্যতম চারজন ‘অ্যাসিড অ্যাটাক ভিক্টিম’-এর উদাহরণ আচ্ছা থাক অতবছর আগের জড়ো করা সহানুভূতিগুলোকে টেনে আনার দরকার নেই কাছাকাছি ভাবি, গত মঙ্গলবার সকালে একজন একুশ বছরীয় মেয়েকে দিল্লীর রাস্তায় খুন হতে হয়(A 21-year old girl was allegedly stabbed to death 30 times in North Delhi on Tuesday morning, NEW DELHI, TOI) এছাড়াও আরো অনেক উদাহরণ নির্বিকারে মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাদের একশো বছর পরও গুগলে খুঁজে পাওয়া যাবে, কিন্তু একশো দিনের আগেই মানুষের সহানুভূতির তালিকায় জায়গা করে নেবে নতুন কিছু ‘উদাহরণ’। এনলিস্টেড হওয়া অবধিই... কিন্তু সেই উদাহরণের বিরূদ্ধে ঘুরে দাঁড়াব যে তার সাহস কোথায়? এইসব উদাহরণের দোষ একটাই ছিল, ওরা ‘না’ বলেছিল। ওরা না বলেছিল নিজের ইচ্ছাকে প্রতিষ্ঠিত করতে, ওরা না বলেছিল পুরুষতন্ত্রের বিরূদ্ধে।

‘না’ জানায় মিনাল (অভিনয়ে তাপসী পান্নু)। সে ‘না’ জানায় তাঁর শরীরি ইচ্ছেটিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য! সে না জানায় রাজভীরের বিরূদ্ধে একটা গোটা পুরুষতন্ত্রের বিরূদ্ধে। “আমার শরীর আমার সিদ্ধান্ত!” আমার সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারটা থেকেই যায়, অধিকার থাকে মানুষ নির্বাচন করার... Either you are paying for it or not paying for it! ইচ্ছে প্রতিষ্ঠা করার দুঃসাহস-এর থেকেই ‘পিংক’-এর কাহিনীর সূত্রপাত। তবে কোনো অ্যাসিড অ্যাটাক বা মার্ডার নয়, ‘পিঙ্ক’-এ পুরুষতন্ত্রের হাতিয়ার লিগাল স্টেপ! যেকোনোভাবে বুঝিয়ে দেওয়া, “তুমি একজন মেয়ে, তোমার জায়গা আমার নিচেই!”, পুরুষতন্ত্রের বেসিক রুল! পুরুষতান্ত্রিক সিস্টেমে ‘মেয়ে’ নামক বস্তুগুলোর জন্য একটা বেঁধে দেওয়া জায়গা থাকে, সেই ঘেরাটোপ থেকেই যারা বেরোনোর চেষ্টা করে তাদের জন্যে বরাদ্দ থাকে ‘শাস্তি’...সাহসী হওয়ার শাস্তি...স্বাধীন জীবনযাপনের শাস্তি। যে ‘শাস্তিগুলো’ সম্পর্কে বয়সন্ধি থেকেই একটু একটু করে জানান দেওয়া হয় একটা বাড়ন্ত শরীরকে...পাশাপাশি ভয় ঢুকিয়ে দেওয়া হয় একটি বাড়ন্ত মনেওপুরুষতন্ত্রের কাছে প্রকারভেদটা দুরকমঃ ১) মানুষ ২) মেয়ে। পোশাকের ইঞ্চিটা ঠিক করে দিতে দিতে ভুলেই যায় স্তনের ভেতরে একটা হৃৎপিণ্ডও আছে। তাঁর ঠিক তাঁর ভুল, তাঁর মন্দ তাঁর ভালো সবটুকু ঠিক করে দেওয়া থাকে। পিংক-এর ঝাঁকুনিটা এই জায়গাতেই, “কোনো মেয়ে যদি একটু হেসে কথা বলে,তাহলেই সে খারাপ ইঙ্গিত দিচ্ছে!” একজন মেয়ের আচার আচরণের উপরেও বসে পুরুষতান্ত্রিক নজরদারি।

২ঘন্টা ১৫ মিনিটের একটি লড়াই স্ক্রিনে দেখতে থাকি। শুধু মিনাল, ফলক , Aendra-এর লড়াই নয়, লড়াইটা আমাদের সকলের। অন্তত যা্রা নির্বাচত ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে এসে বাঁচি...যারা স্বাধীন জীবনযাপনে বিশ্বাসী...যারা বয়ফ্রেন্ডের মুখের উপর নিজের সিদ্ধান্ত জানাই...যারা পুরুষতন্ত্রকে সময় শেষের হুমকি দিই...হুম! যারা জেন্ডার ইকুয়ালিটির স্বপ্ন দেখি! ‘পিঙ্ক’ এমনই একটি লড়াইয়ের ছবি, একটি প্রতিবাদী শব্দ। কতগুলো চেনা জানা সত্যিকে চোখের সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া! মানুষকে ধাক্কা দিয়ে বলা যে দেখুন, দেখুন প্রতিদিন কি হচ্ছে!

‘পিঙ্ক’ ছবির অন্যতম প্রধান চরিত্র মিনাল(অভিনয়ে তাপসী পান্নু)

একটি বোল্ড এবং সাহসী ক্যারেক্টার। বলা যায় একবিংশের ফেমিনিসমের একটি দৃষ্টান্ত। যে কাঠগোড়ায় দাঁড়িয়ে ভয়হীন ভাবে চিৎকার করে অপরাধীকে বলে যে সেই ছেলেটির দুটো চোখই তাঁর নষ্ট করে দেওয়া উচিৎ ছিল। “are you a virgin?” প্রশ্নটির উত্তর সবার সামনে দিতে সে কোনো দ্বিধাবোধ করেনা। ব্ল্যাকমেলিং-এর বিরূদ্ধে লিগাল স্টেপ নেওয়ার জন্য তাঁকে মলেস্টেড হতে হয়, তাও সে ভয় পেয়ে পিছিয়ে আসেনা।

Aendra (অভিনয়ে Andrea Tariang) মেঘালয়ের মেয়ে



আমাদের সিস্টেমের একটি চলতি রীতি আছেনর্থ ইন্ডিয়ার মেয়েদের অন্যান্য আর চারপাঁচজন ভারতীয় মেয়ের থেকে অন্যরকমদেখতে হয় বলে তাঁদের ডেইলি হেনস্থা বেশ কিছুটা বেশি তাঁদের শুনতে হয়, “চাইনিজ” “হট চাইনিজইত্যাদি মন্তব্য এছাড়াও অনেক অনেক কিছু! তাঁদের মধ্যেই একজন, বলা ভালো তাঁদের হয়েই একজন Aendra সে মেঘালয়ের ছিল তাই সমাজের থুড়ি আইনের কাঠগোড়ায় একটা অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়, তাঁর হোমটাউন কি? পরিচালক খুব সতর্কিতভাবে চরিত্রটি নির্বাচন করেন, হয়তো তাঁর হোমটাউনটাও ইচ্ছাকৃতভাবেই মেঘালয় কারণ মেঘালয়তেই চলে মাতৃতন্ত্র

ফলক (অভিনয়ে কৃতি কুলহারি) আরো একটি পরিচিত শেড



 একজন অত্যন্ত ঠান্ডা মাথার মেয়ে, যে ঝামেলা এড়িয়ে চলে ফলক হল আমাদের ফ্রেণ্ড সার্কেলের সেই সদস্যটি যে আমাদের কঠিন সময়ে মাথা ঠান্ডা রেখে সঠিক উপদেশ দেয় যে তুলনামূলক ম্যাচিওর হয় বাকি বন্ধুদের থেকে! ফলকের বাড়িতে তাঁর অসুস্থ ভাই সে দিল্লী আসে একটা চাকরির জন্য, উপার্জনের জন্য! এইক্ষেত্রে উল্লেখ করা প্রয়োজন স্ৎ পথে উপার্জনের জন্য এই সবথেকে শান্ত মেয়েটাই যে সবথেকে ভয়ংকর হতে পারে সেটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই হয়তো পরিচালক ফলকের মুখে সবথেকে উদ্ধত এবং সাহসী সংলাপটি বসান, “প্রস্টিটিউশন হলেও নামানে না

পিংক’-এ পুরুষত্বের বেশ কয়েকটি দৃষ্টান্তগুলি পাওয়া যায়
) রাজভীর ও তাঁর বন্ধুরা। এরা হল সিস্টেমের সেই মানুষকটা যারা মেয়েদের নিজেদের সম্পত্তি মনে করে সেই গোষ্ঠীটিকে আরো একবার মুখোশবিহীন অবস্থায়পিংকসবার সামনে নিয়ে আসে তাদের চরিত্রটিকে নির্দিষ্ট করার জন্য তাদের ঠোঁটে বসানো হয় সেই বহুপ্রচলিত এবং পরিচিত সংলাপ, ওরা মেয়ে কতদূর আর যেতে পারবে? কিংবা মেয়েটা খুব বার বেরেছে ওকে বুঝিয়ে দেওয়া উচিৎ ওর জায়গাটা কোথায় এই গোষ্ঠীভুক্ত মানুষেরানাশুনতে ভালোবাসেন না,ভাবেন সম্পূর্ণ পৃথিবী তাদের পৌরুষের পায়ে এসে মিনতি করবে যারা নিজেদের দোষ আড়াল করার জন্য বিপরীতের সেইউদ্ধত মেয়েটিরগায়ে লাগিয়ে দেয় প্রস্টিটিউশনের তকমা, তৈরী করে মেয়েটিরকোয়েশ্চনেবল ক্যারেক্টার

) ফলকের বয়ফ্রেন্ড একজন ডিভোর্সড মধ্যবয়স্ক প্রফেসর যে ফলকের থেকে বয়সে অনেকটা বড়ো। ফলককে ফিনান্সিয়ালি হেল্প করতেন এই মানুষটি। ফলক নিরুপায় ভাবে তাঁর কাছে যায় তাকে পাশে পাওয়ার খাতিরে। কিন্তু এই যেই সময়ে তাঁর ফলকের পাশে থাকা উচিৎ ছিল, ফলকের তাকে প্রয়োজন ছিল সবথেকে বেশি, সেই সময় তিনি নিজস্বার্থে নিজেকে গুটিয়ে নেন। একজন স্বার্থপর মানুষ, বলাভালো একটি স্বার্থপর পুরুষত্ব।

৩)দীপক। মিনাল, ফলক, Aendra -এর লইয়ার(lawyer)(অভিনয়ে অমিতাভ বচ্চন)।


‘পিঙ্ক’-এর আরো একটি প্রধান চরিত্র। পরিচালক অত্যন্ত যত্ন করে এই চরিত্রটিকে তৈরী করেছেন। তাঁর ঠোঁটে বসিয়েছেন তীক্ষ্ণ সংলাপগুলি। যে বিষয়গুলি সিস্টেমের চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর প্রয়োজন ছিল, সেগুলিকেই সংলাপ তৈরী করেছেন রিতেশ(Ritesh Shah, dialogue writer of Pink)। গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে তখন, যখন বিগ বি-এর স্বরে শোনা যায় “yah par ghadi ki sui character decide karti hai!” দীপকের স্বর রুখে দাঁড়ায় অন্যায়ের বিরূদ্ধে। তাঁর সংলাপের ধারে স্টেরেওটাইপ চিন্তাভাবনারগুলর গা কেটে যেতে থাকে, ক্ষতের জায়গায় তৈরী হয় নতুন ভাবনার কোশ। ব্যপারটা হয়ে ওঠে, ‘শরীর তোমাদের স্বর আমার!’

সংলাপ তৈরিতে রিতেশ অনবদ্ধ। ‘পিঙ্ক’-এর প্লাস পয়েন্ট হল ‘পিঙ্ক’-এর সংলাপ। শান্তনু মৈত্রের ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর ছবিটিকে একটি অন্যমাত্রা দেয়। তৈরী হয় থ্রিল, একটু একটু করে গড়ে দেয় লড়াইয়ের জমি। ছবিটিতে বিশেষ কোনো জাড়িজুড়ি নেই,সাদা মাটা একটি গল্প বলার ধরণ। ছবিটি শুরু হয় একটি ক্রাইমের আফটার এফেক্ট থেকে। সেই না দেখানো ক্রাইমটি ঘিরেই থ্রিল।
কাঠগোড়ায় দাঁড়ানো সাক্ষীগুলির স্টেটমেন্টকে ভিত্তি করে সেই না দেখা ক্রাইমটির যে ছবি নিজের মনে মনে করে নেওয়া যায়, শেষ দৃশ্যে এক্সাক্ট ঘটনাটি দেখিয়ে নিজের মনের মত সাজিয়ে নেওয়া সেই ছবির উপর একটা বাড়তি এবং অপ্রয়োজনীয়তা যোগ করা হয়েছে বলে মনে হল।
‘পিংক’-এ পুলিশ অফিসারটিকে মহিলা করা খানিকটা ইচ্ছাকৃত মনে হল। যেখানে ফেমিনিসমের কথা হচ্ছে, সেখানে একটা নেগেটিভিটির খুব প্রয়োজনীয়তা ছিল বলে মনে হয়না!
‘পিংক’ নামটি নিজেই অ্যাট্রাক্টিভ। পিংক বা গোলাপি রঙটি ‘গার্লস কালার বা মেয়েলি রং’ বলেই পরিচিতি আছে। একই কারণে এই ছবির নাম ‘পিংক’, এরকম ধারণা করে থাকলে সেই ধারণাটি কিন্তু ভুল!
(Enters writer Veeresh Malik, who wrote a blog on TOI, to explain the meaning. In fact, he has done a lot of research and found out that in many countries and cultures, the word Pink means “vagina of the sort that is bought, with violence”.) অর্থাৎ যোনির রং গোলাপি। ‘পিংক’ অধিকারের কথা বলে, ‘পিংক’ বিপ্লবের কথা বলে। ‘পিংক’---একটি প্রতিবাদ। স্টেরেওটাইপ চিন্তাগুলির বিরূদ্ধে প্রতিবাদ, গোটা পুরুষতন্ত্রের বিরূদ্ধে প্রতিবাদ। ‘আমার যোনি, আমার সিদ্ধান্ত, আমার অধিকার’, the fucking fact is in front of you!


Picture courtesy : Google

Friday, 29 July 2016

অবৈধের কাব্যপোন্যাস : ক্ষত

পরিচালক- কমলেশ্বর মুখার্জী।
কাস্টিং-  প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়, পাওলি দাম, রাইমা সেন, ত্রিধা চৌধুরি, রণদীপ বসু এবং অন্যান্য।

এমন এক অ্যাটস্মোফিয়ারে প্রতিনিয়ত আমাদের শ্বাস বায়ু ঘোরাফেরা করে, যেখানে শ্বাসবায়ুকেও খেয়াল রাখতে হয় হুটপাট কোনো ‘অস্বীকৃত’ মন্তব্য না করে ফেলে! থাকে চিন্তাভাবনার ওপরেও কড়া নজরদারি। নজরদারির মুখ্য আসনে পায়ের ওপর পা তুলে দিব্য বসে থাকে একজোড়া চোখ! সব সময় নজর বোলাতে থাকে সেইসব শব্দের লিস্টে, যে শব্দগুলো কখনোই জনসম্মুখে বলা উচিৎ নয়! এই একজোড়া চোখ,যার অধিকর্তা সিস্টেম, কিংবা মেজরিটি? আচ্ছা এই সিস্টেমকেই যদি একটা শরীর হিসেবে ভেবে নিই; তাহলে তারও আর চার পাঁচটা মনুষ্য শরীরের মত আছে হাত,পা,চোখ,নাক, মুখ ইত্যাদি এবং ক্ষিদে, রাগ, ঘেন্না, আনন্দ, দুঃখের মত বেসিক কিছু অনুভুতি। ‘কখনো প্রকাশ করা উচিৎ নয়’ লিস্টিকে যদি সঙ্গে করেই এই একই লাইন আবার লিখি? তবে দাঁড়ায় এই শরীরের ও হাত ,পা, চোখ, নাক,মুখ এবং  আছে যৌনাঙ্গ! আনন্দ,দুঃখের মত যৌনতাতেও সমান গুরুত্ব দিতে হয়, বলা উচিৎ দিতেই হয়! পার্থ্যকটা চিন্তাভাবনার সেনসরড ও আন সেনসরড ভার্সানে! যেটা আমি ভাবছি সেটা প্রকাশ করতে পারব কিনা তার জন্য চেয়ে থাকতে হয় নজরদারির সেই অধিকর্তার দিকে! এক ধরণের চলতি জড়তা!

‘ক্ষত’ এমন একটি ছবি যা নজরদারির অধিকর্তার ছড়ির আঘাতের দাগ পিঠে নিয়েও চলতি জড়তাকে কাটিয়ে উঠে সহজ সত্যগুলো বলে, শরীরের সত্যগুলো বলে, চাহিদার সত্যিগুলো বলে, সেক্স ইস আ বেসিক নীড! বয়ঃসন্ধিক্ষন থেকে ক্ষিদে,আনন্দ, দুঃখ ছাড়াও ‘যৌনতা’ নামক যে অনুভূতিটিকে শরীর লালন-পালনের দায়িত্ব নেয়, সেই সত্যিটি সবার সামনে বলার আগেই যেন মনে হয় হাজার দুটো চোখ ভাবনা প্রকাশের দিকে রূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, গন্ডিবদ্ধ মস্তিষ্ক বারবার রিমাইন্ডার দিতে থাকে ‘সেক্স’ শব্দটি হুটপাট অটো,বাস-এ কিংবা লোকালয়ে উচ্চারণ করতে নেই। পাশাপাশি একথাও সত্য যে মধ্যবিত্ত বাঙালি কাপেল-এর বন্ধ দরজার ওপাশের প্রাইভেসি আড্ডার আলোচনা, হাসির খোড়াক হয়ে ওঠে।

যে রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাঁটাচলা করতে হইয়...সেখানে ফোনের ওপাশে গার্লফ্রেন্ড থাকলেও চোখজোড়া অটোয় বসা অচেনা সুন্দরীর দিকে তাকিয়ে থাকে, কিংবা পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ‘ডবকা’ মেয়েটির দিকে! প্রেমিকা বা স্ত্রী-র স্তন ছোঁয়া হাত ইচ্ছা করেই রাস্তার অচেনা মেয়ের স্তনে ঘষা খায়!(আমি জেনারেলাইসড করছিনা)...
নতুন ঠোঁটকে আপন করার সময় কি পুরাতন ঠোঁটজোড়ার স্বাদ মনে পড়েনা? হয়তো পড়ে কিন্তু কেউ প্রকাশ করিনা। সেইক্ষেত্রে নির্বেদ লাহিড়ী(অভিনয়ে-প্রসেন জিত চট্টোপাধ্যায়) যদি জানান, “ আমি তোমাকে ভালোবাসি সৃজিতা, কিন্তু আমি অন্তরাকেও চাই!” তবে তিনি কেন এক্সেপ্টেবল হতে পারলেন না? তাকে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যেতে হল? তিনি যদি জানান, “আই লাভ কার্ভস, আমি না দেখে থাকতে পারিনা!” তবেই তাঁর হাইএডুকেটেড স্ত্রী সৃজিতা (অভিনয়ে রাইমা সেন) তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে , “fuck your writings…fuck your characters!” তখনই তিনি সমাজের চোখে, মিডিয়ার ক্যামেরায় অস্বীকৃত? সিকনেস কোথায়, সিক কে? সিকনেস এক্সেপটেনসে, সিকনেস মানসিকতায়! আর পার্থক্য, পার্থক্য সাহসিকতায়, পার্থক্য প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্যে!

‘ক্ষত’-এর নির্বেদ লাহিড়ীর চরিত্রে অনেকগুলো শেড, অনেকগুলো রঙ! ভালোবাসার রঙ, রোমাঞ্চের রঙ, শরীরের রঙ, কালির রঙ,তবে সবই ‘লাল’…তাঁর জীবনে ঢেউয়ের রঙও লাল! তাঁর চরিত্রের সবকটি শেডের মধ্যে থেকেই তাঁর আচরণ, তাঁর সংলাপ নজরদারির আড়লে থাকা শরীরতুতো,বাসনাগ্রাহ্য সত্যিগুলোকে সরাসরি তুলে ধরে! তাঁর কামনা তাঁর শরীরের প্রতি ভালোবাসা,টান প্রকাশ্যে আসলেই তিনি পার্ভার্ট, আর যে মানুষটা ‘ভদ্রলোকের’ মুখোশ টেনে জেনারেল কম্পার্টমেন্টে ভিড়ের সু্যোগে একজন মেয়েকে ক্রমাগত মলেস্টেশনের মাধ্যমে বিকৃত মানসিকতাগুলোকে উসুল করেন তিনি পার্ভার্ট নন?

অন্তরা(অভিনয়ে পাওলি দাম) কলেজ জীবনে তাঁর মাসতুতো ভাইয়ের প্রেমে পড়েছিল, লিটল ম্যাগাজিনের লেখিকা বিবাহিত জীবনে এসে তাঁদের সময়ের অ্ন্যতম লেখক ও তাঁর বন্ধুর হাসব্যান্ডের প্রেমে আবার পড়ে, তাই সে ব্লাডি বিচ!
আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই একটা বন্যজন্তু লুকিয়ে থাকে, নানাভাবে নানা ঘটনার মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। কোন মানসিকতা বেশি হিংস্র, নির্বেদ এবং অন্তরা যারা একে অপরের শরীরকে ভীষণ ভালোবেসেছিল তাঁরা, নাকি যারা তাদের অ্যাক্সেপ্ট না করে এক কোণায় ঠেলে দিল তাঁরা?

ছবির নানা দৃশ্যাংশের মাঝেমাঝেই পান্ডুলিপির ওপর রক্ত ঝরে পড়ে, ‘ক্ষত’-এর পান্ডুলিপি,আত্মজীবনির পান্ডুলিপি! লেখক বারেবারে পুড়িয়ে দেন তাঁর লেখা তাঁর সৃষ্টি! সারা ছবি জুড়ে শুধু ক্ষত। সিস্টেমের ছড়ির আঘাতের ক্ষত, ভালোবাসার ক্ষত! যাঁর পরিণতি মৃত্যু কিংবা মেন্টাল অ্যাসাইলামের বদ্ধ চার দেওয়াল। ইমোশান ও অনুশোচনাকে বাদ রেখে বাদবাকি ছবিটিতে দৃষ্টিপাত করলে স্বীকার করতেই হয় পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় নিজের সৃষ্টিকে চলতি বিশ্বাসে আটকে না রেখে “ক্ষত”-এর মত সাহসি পদক্ষেপ নিয়েছেন। এক আত্মজীবনীতেই সমস্ত রহস্য এবং রোমাঞ্চের ধারবাহিকতা। প্রেম, শরীর, থ্রিল… সম্পূর্ণ ছবিটি একটি কাব্যপোন্যাসের মত,ছবির চলন বলনে কাব্যনাটকীয়তা! যেমন-  নির্বেদের স্ত্রী সৃজিতা বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত জানানোর পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা লেখার কপির উপর নির্বেদ কুঁকড়ে শুয়ে কাঁদতে থাকে, দৃশ্যটি এক লেখকের ক্ষতের ক্থা বলে।

‘ক্ষত’-তে শব্দের ব্যবহার অসাধারণ লাগল। স্ক্রিনে কোনো ঘটনা দৃশ্যায়িত হওয়ার আগেই শব্দের উপস্থাপনা দর্শকমনকে রোমাঞ্চের পূর্বাভাস দেয়। একটি দৃশ্যে পালাম্যুর জঙ্গলে বৃষ্টি আসার আগে ‘মাঝে মাঝে তোমার পরশখানি দিও’-এর ইন্সট্রুমেন্টাল দৃশ্যজুড়ে রোম্যান্টিসিসমের সঞ্চার করে। সিনেমাটোগ্রাফি ‘ক্ষত’-এর অন্যতম আকর্ষন। ৯০-এর দশকের স্ময়কাল উপস্থাপনার ক্ষেত্রে একটু গড়মিল থেকে গেলেও সিস্টেমের রাখঢাক নজরদারিকে বুড়োআঙুল দেখিয়ে ‘ক্ষত’-এর সাহসিকতা অনেক বেশি গ্রহনযোগ্য বলে মনে হয়েছে। আড়ালে আবডালে কেচ্ছাপ্রিয় বাঙালি মন ‘ক্ষত’-এর সোজাসাপটা বক্তব্যকে পার্ভার্ট বলে অ্যাক্সেপ্ট না করলেও, শরীরতুতো সত্যিগুলো সত্যিই থেকে যাবে, তা প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে!

ছবি সৌজন্যে : গুগল