HAPPY READING...


Saturday, 15 October 2016

অলক্ষী কথা

বিকেলে পুজোর সময় ঠাম্মার হাত থেকে প্রায় পাচাঁলিটা একপ্রকার কেড়ে নিয়েই বললাম, দেখি দেখি আমিই পড়ব! কি তোমরা সুর সুর করে করে পড়, আমাকে দাও দেখি! তার একটু আগেই পুজোর যোগাড় করতে করতে নারীস্বাধীনতা নিয়ে খুব ভাষণ দিয়েছি! মানে ‘লক্ষী’ মেয়ে কারে কয় আর কি! যাই হোক, পাঁচালি তো বেশ সুর করে পড়া শুরু করলাম, জীবনে প্রথমবার…বেশ উৎসাহ নিয়ে পড়া শুরু করলাম:
“ দোল পূর্ণিমা নিশি নির্ম্মল আকাশ।
ধীরে ধীরে বহিতাছে মলয় বাতাস।।
লক্ষীদেবী বামে করি বসি নারায়ণ।
কহিতেছে নানা কথা সুখে আলাপন।।”
আমারও উৎসাহ তুঙ্গে, এই তো কি সাদামাটা বাংলা ভাষায় লেখা! ফুরফুরে লাগছিল ভেতরটা! কিছুটা পড়ার পরই ব্যপারখানা যতটা আন্দাজ করতে পারলাম,

অনেকটা  এরকম, নারদমুনি ‘লক্ষী মাতা’-কে জিজ্ঞেস করছেনঃ
“বল বল বল দেবী কি পাপের ফলে।
ভীষণ দুর্ভিক্ষ সদা মর্ত্ত্যবাসী জ্বলে।।”
উত্তরটা কি হবে সেই নিয়ে কোনোরকম ধারণা আমার ছিলনা। বৃহস্পতিবার সন্ধেতে বাড়ি থাকলে ঠাম্মাকে পড়তে শুনি, ঠাকুরঘর থেকে প্রত্যেক স্পষ্ট শব্দ আমার ঘর অবধি এসে পৌছায়না, ওই সুরটুকুই শুনি। মনে আছে অনেকদিন আগে লক্ষী পাঁচালি নিয়ে একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম, লিখেছিল লক্ষী পাঁচালি অষ্টাদশ উনবিংশ শতকের বাঙালি মহিলাদের একপ্রকার ব্রেনওয়াশের টাইপ! লক্ষীপাঁচালিতে নারদ মুনির প্রতি লক্ষীদেবীর উত্তর তা সত্যি করে তোলে। পৃথীবতে দুর্যোগের কারণ হিসেবে লক্ষীদেবী উল্লেখ করেছেন,
“লজ্জা আদি গুণ যত নারীর ভূষণ।
শরীরের হতে তারা করেছে বর্জ্জন।।
অতিথি দেখিলে তারা কষ্ট পায় মনে।
স্বামীর অগ্রেতে খায় যত নারীগণে।।
পতিরে করিছে হেলা না শুনে বচন।
ছাড়িয়াছে গৃহস্থলী ছেড়েছে রন্ধন।।
পুরুষের পরিহাসে কাটায় সময়।
মিথ্যা ছাড়া সত্য কথা কভু নাহি কয়।।’’
এতদূর পড়ার পর ঠাম্মা হাতটা চেপে বলল, আর হাসতে হবেনা! নে এতটাই পড়…আর শেষ প্রণাম মন্ত্রটুকু পড়ে নে!
লক্ষীদেবীর এরকম কথা শুনে আমি প্রথমে ভাবছিলাম দেবী বোধ হয় সামান্য জেলাস! কিংবা জেলাস সেজন যিনি নিজের মনের মধ্যেকার কথাগুলোকে লক্ষীদেবীর লিপে টুক করে সেট করে দিয়েছেন। প্রতি বৃহস্পতিবারের সন্ধেতে লক্ষীদেবীর এই কথাগুলো যাতে ‘নরম মন’-এ ম্যাজিক বুলেটের মত গেঁথে যায়! ‘লক্ষী’ মেয়ের একটা বাঁধা ধরা স্ট্রাকচার, হ্যাঁ ফেমাস বাংলা মেগা সিরিয়ালগুলোয় যে ধরণের ‘লক্ষী মেয়ে’-কে ফলো করা হয়। যাক গে, এই স্ট্রাকচারকে ভেঙ্গেচুরে নিজের মত করে সাজিয়ে নিয়েছে ‘অলক্ষী’রা। পলক, মিনাল –এর মত আরো অনেকেই...যাঁরা অনেক আগেই ‘অলক্ষী’ হওয়ার সাহস দেখিয়েছেন। তাঁদের ফলো করছি আমরা, যাঁরা জেন্ডার ইকুয়ালিটিতে বিশ্বাস করি, স্বাধীন জীবন-যাপনে...নিজের মত বাঁচতে ভালোবাসি। আমাদের কাছে ‘লক্ষী’ মেয়ের স্ট্রাকচারটা একদম আলাদা, তাই লক্ষী পাঁচালির শব্দগুলোও। আমরা জোরে হাসি, জোরে কথা বলি... ‘লক্ষী মেয়ে’ নয় একজন ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করি। ‘অলক্ষী’ হওয়ার পদক্ষেপটা অনেকটা বেশি সাহসের, অন্তত ‘লক্ষী’ মেয়ে হওয়ার চেয়ে অনেক মজার!

ছবি সৌজন্যে : গুগল

No comments:

Post a Comment