HAPPY READING...


Tuesday, 1 November 2016

আনন্দ এবং ভয় পাশাপাশি হাঁটেনা

আমার বাড়িটা ঠিক শহরে নয়,শহর থেকে একটু ভেতরে বলা যায় শহর ঘেঁষা। অনেকদিন এরকম হয়েছে রাত করে বাড়ি ফিরেছি টিউশন থেকে বা রিলেটিভস-এর বাড়ি থেকে একা ফিরেছি। ১১টাতেও আমার শহরতলিতে মানুষজন জমজমাট করে। সেইসব চেনা মানুষদের ভিড়ে হাঁপিয়ে উঠলেও কখনো মনে হয়নি এই ভিড়ে এই শহরতলির রাস্তা, অলি গলি আনসেফ। একমুহূর্তের জন্য রাতবিরেতে একা বাড়ি ফিরতে ভয় পাইনি। দোকান,অটোর ভিড়,অযাচিত জ্যাম, না মানা ট্রাফিক সিগন্যাল, অত্যাধিক ভিড়, অটোর লাইন এসবই আমার শহরতলির চেনা দিক, একটা সেফ জোন।
আজ ভাইফোঁটা উপলক্ষে সকাল সকালই রিলেটিভের বাড়ি যাই, সেখানে নিজের মানুষদের মধ্যে থেকে বাড়ির বাইরের রাস্তাঘাটে কি ঘটছে সেই সম্বন্ধে সত্যিই আঁচ করা যায়না! বেরোতে বেরোতে খানিক রাত হয়ে গেল ওখান থেকে, রাতের কাঁটা সাড়ে দশটা পার করেছে। বাবার সাথে পাশাপাশি হেঁটে ফেরার সময়,টাইম সেভ করার জন্য মেনরোডের বদলে ফ্লাইওভারের নিচের রাস্তা বেছে নিই। একটু এগোতেই বুঝতে পারি, বাতাস আস্তে আস্তে ভারি হচ্ছে কোনো নেশাবস্তুর তীব্র ধোঁয়ায়, কষ্ট হতে থাকে। শ্বাসকষ্ট, কিংবা একটা ভয়। সামনে এগোতেই দেখি, কয়েকজন ছেলে গান চালিয়ে রাস্তা ঘিরে উদ্দাম নৃত্য জুড়েছে, সাউন্ড বক্সে বাজছে "বেবি কো বেস পসন্দ হে", আর বাতাসে বইছিল না প্রেম নয়...অ্যালকোহলের গন্ধ! ওরা আমাদের যাওয়ার জন্য রাস্তা ছাড়েনি, আমরাই খুব কষ্ট করে পাশ কাটিয়ে এলাম। তাকিয়ে থাকা চোখগুলো এড়াতে আমি চোখ আটকে রাখলাম মোবাইল স্ক্রিনে। হেঁটে আসা যাবত সম্পূর্ণ রাস্তায় কোনো জন মনিষ্যি দেখতে পেলাম না। বাবাকে বললাম, স্টেশন ও থানা চত্তরে হয়তো ব্যাপারটা সেফ হবে। জানিনা মনের ভুল কি,কিংবা আমার ঘ্রাণেন্দ্রিয়র গাফিলতি... থানার পাশ কাটানোর সময় সেই গন্ধটা আরো তীব্র ভাবে নাকে ঠেকল। সৌভাগ্যবশত অটো পেয়েছিলাম আমরা। ফেরার রাস্তায় দেখলাম আরো কিছু জায়গায় সেই উঠতি নাচুনেদের উদ্দাম নৃত্য, মেয়ে দেখলে টিটকিরি, আর মদ খেয়ে সামলাতে না পারার নজির। নিজের থেকে বয়সে অনেক ছোটো একজন ছেলেকে দেখলাম রাস্তায় পড়ে আছে বেহুঁশ হয়ে, তার সাইকেল মাঝরাস্তায় গড়াগড়ি খাচ্ছে। কিছুদূর আসার পর আবার এক ঝামেলা! কি আর করা যাবে,মোটামুটি এই বছরের মত তো বাঙালির তেরো পার্বনের ইতি,তাই সেলিব্রেশনের জেরটা এই অবধি গড়াতেই পারে! ক্ষতি কি? তাতে কার পথ চলতে অসুবিধা হল, আর কে আজ তার ২০ বছরের জীবনে নিজের শহরতলিতে প্রথমবারের জন্য আনসেফ ফিল করল,সেই নিয়ে কারোর মাথা ঘামানোর কথা নয়!যাক গে, আমার চেনা শহরতলির এই অচেনাদিকটা জানার প্রয়োজন ছিল বেশ। অন্তত নিজকে সেফ দাবি করার আগে উৎসবের এই শেষ রাতটার কথা মনে করব।
মা এসব শুনে বলে, এইভাবেই দেশটা অধঃপতনে যাচ্ছে! আমি মনে মনে ভাবি এর জন্য কারা দায়ী? মা বলে পুলিশ কি করছিল রাস্তাঘাটের এই অবস্থা, আমি হাসলাম। মনে মনে ভাবলাম যা করে! মারছিল...মানে মাছি আর কি!

ছবি সৌজন্যে : গুগল

No comments:

Post a Comment