HAPPY READING...


Thursday, 7 March 2019

নারীদিবসের শুভেচ্ছা তাদের, যারা ভাবে একজন মেয়ে কারোর মা কারোর বোন কারোর স্ত্রী

আমরা একটা রাষ্ট্রের কথা ভাবছি, যে রাষ্ট্র একজন নারবাদীর মত ভাবতে শিখেছে?  যে রাষ্ট্র একটি সাবলম্বী রাষ্ট্র হয়ে উঠতে পেরেছে? পারেনি, এক পিতৃতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কখনো সাবলম্বী হয়ে উঠতে পারেনা, এবং তার প্রাপ্তমনস্কতা নেই তাই নারীবাদকে পুরুষবিরোধী মতবাদ মনে করে, এবং সাম্যতা এইটুকু শব্দ শোনার পর তারা তাদের নিজের স্বার্থ অনুযায়ী বস্তুগুলোতে  সাম্যতার কথা চাপিয়ে দেয়। আমাদের রাষ্ট্র এমন এক রাষ্ট্র, যেখানে আসিফা-এর মৃত্যুর পর আসিফার ভিডিও এক্সভিডিও- এ তা সার্চলিস্টের ট্রেন্ডিং ভিডিও ছিল। আমাদের দেশ কখনও একজন নারীবাদীর মত ভাবতে পারবেনা।



 প্রথমত, নারীবাদ কেবল একটা মেয়ের জন্য মেয়ের অধিকারের জন্য লড়াই নয়, ঠিক তেমনই পিতৃতান্ত্রিক অধিকারের জন্যেও লড়াই নয়। আমাদের দেশের অনেক মানুষ সেক্সিসম শব্দটার সাথে পরিচিত নন একইভাবে 'ফ্যালোসেন্ট্রিসিম'-এই শব্দটার সাথেও পরিচিত নন, অথচ  এই দুই সমস্যাই আমাদের দেশে দারিদ্র্য,  সাম্প্রদায়িকতা, মৃত্যু ইত্যাদির মত একটা বড় সমস্যা। সেক্সিসম- এর অর্থ যেখানে একটি জেন্ডার প্রাধান্য পায় এবং বাকি জেন্ডার-এর উপর অন্যায় করা হয়, সমান অধিকার প্রাপ্ত হয়না বরঞ্চ এক্সপ্লয়েটেড হয়, দ্বিতীয়ত, 'ফ্যালোসেন্ট্রিসম' অর্থাৎ ফ্যালাস- কেন্দ্র করেই শক্তির উৎপত্তি তাই পুরুষ সর্বশক্তিমান এবং নারীদেহে তা না থাকায় নারী দেহকে অপূর্ণ ও নারীকে দুর্বল মনে করা হয় এই যুক্তিতে। এছাড়াও, পিতৃতান্ত্রিক ভাবনা নারীকে দুর্বল মনে করাতে বাধ্য করে, এর পেছনে একাধিক পুরাতন পলিটিক্স এবং কারণ আছে। সামাজিক প্রেক্ষাপটে কারণগুলি এক একসময় পাল্টেছে। কিন্তু উদ্দেশ্যটা সেই এক, পিতৃতন্ত্র এক একসময় এক একটি নিয়ম মেয়েদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে ও মানতে বাধ্য করেছে কারণ তার একটা সবসময়ই ভয় ছিল, ক্ষমতা হারানোর ভয়! ব্রাহ্মণ পিতৃতন্ত্র একসময় স্বল্পবয়সী বিধবা মেয়েদের নয় আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলত আর নয়তো তার চুল কেটে তার যৌনতা কেড়ে নিয়ে তাকে এক ঘরে করে রাখত, কিন্তু একটি সিমিলারিটি এযাবৎ চলে আসে, তখন বিধবাবিবাহ মেনে না নিলেও, নিজরক্ষার অধিকার ছিনিয়ে নেওয়া বিধবা মেয়েটিও আড়ালে পিতৃতন্ত্রের ভোগের বস্তু ছিল এখনও তাই আছে, একজন মেয়ে একটি বস্তু যাকে যার ইচ্ছে গুলো যার সিদ্ধান্তগুলো এবং যাবতীয় সবকিছুই আমাদের সমাজ ব্যবস্থা তৈরি করে দেয়। এরূপ নিয়ম কেন হল তারও অনেক ব্যখ্যা রয়েছে কিন্তু এখানে সেসব আলোচনা করবনা। এখন বিষয়টা হচ্ছে, নারীবাদ এই ভাবনাটি বা এই শব্দটি লোকমুখে প্রচার হওয়ার পর থেকেই একটি পিতৃতান্ত্রিক বিশ্লেষণ প্রচারিত হয়েছে, নারীবাদীরা যেহেতু একটা সমান অধিকারের ধারণা ও দাবী নিয়ে আসে, পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা নারীবাদকে এক পুরুষবিদ্বেষী মতবাদ স্বরূপ প্রচারিত করে। একটা ছোট্ট কথা বলি, একটা গোষ্ঠী মেয়েদের সম্মান দিতে বলে, আর একটা গোষ্ঠী সব মানুষকে সমান সম্মান দিতে বলে যাতে 'মেয়েছেলের মত কান্না'টা কোনো দুর্বলতার প্রতীকী এবং হিজড়ে শব্দটা আর 'গালি' হিসেবে এক্সিস্ট না করে। প্রথম গোষ্ঠী নারীদের সুরক্ষার কথা বলে, দ্বিতীয় গোষ্ঠী এক সমাজ ব্যবস্থার কথা বলে যেখানে নারীকে সংরক্ষণের প্রয়োজন হবেনা। একটা সুস্থ সুরক্ষিত সমাজ, যেখানে প্রত্যেক জেন্ডারের মানুষ সমান অধিকারে সমান ইচ্ছায় সুরক্ষিত ভাবে বাঁঁচবে৷ এই দ্বিতীয় গোষ্ঠী নারীবাদে বিশ্বাস করে। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্রে সেসব এক অলীক স্বপ্নের মত, কারণ এখানে দেশে দেশে যুদ্ধ লাগলে এক দেশ আর এক দেশের 'মা চুদাই'-এর পোস্ট শেয়ার করে এবং সেই পোস্টে অজস্র লাইক পড়ে। কোনো মেয়ে যুদ্ধের বিরোধিতা করলে তার ছবি প্রোফাইল থেকে নিয়ে, তার রাইট টু প্রিভেসি লঙ্ঘন করে তার ছবি নিয়ে নোংরা এডিট করা হয়৷ তাকে ইনবক্সে, কমেন্টে রেপ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়, যৌন হেনস্থা করা হয় এবং এ করে থাকে মেয়েরাও, কারণ একজন মেয়ে অর্থাৎ যেমন ফেমিনিস্ট নয় আবার বিপরীতে একজন মেয়ে পিতৃতান্ত্রিক হতে পারে আর পিতৃতন্ত্রের চোখে ধর্ষণ কোনো অন্যায় নয় একটি শাস্তি। তাই অকপটে বলে দেয়, এই মেয়ের সাথে এমনই হওয়া উচিৎ, বা এই মেয়েটির বোল্ড পোশাকের কারণে এমন হল। এইক্ষেত্রই গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু সে নিজের ইচ্ছেমত পোশাক পরেছিল তাই তার শাস্তি হওয়া উচিত বা যেহেতু সে প্রতিবাদ করেছিল তাই তার শাস্তি হওয়া উচিৎ।  যে দেশে মেয়েদের ফরসা হওয়াটা এত বেশি ইম্পর্ট্যান্ট যে রমরমিয়ে বছরের পর বছর ফেয়ার অ্যান্ড লাভ্লি বিক্রি হয়, সেই দেশে আর কি ভাল হতে পারে? যে দেশে মেয়েরা জন্ম থেকেই উদবাস্থু অর্থাৎ একটা সময়ের পর তার বাড়ি ছেড়ে তাকে অন্য বাড়ি গিয়ে থাকা শুরু করতে হয় কারণ সে ভালোবেসেছিল বলে সে দেশে সাম্যের লড়াই মিথ্যে! যে দেশে মেয়েদের স্বামীর নামে পরিচিতি দেওয়ার নিয়ম ছিল, সেই দেশ নারীস্বাধীনতার কথা ভাবতে পারেনা কখনও!  যে দেশ মেয়েদের প্রয়োজনে দেবী বানায় পরমুহূর্তেই   তাকে ছেনাল বলে সম্বোধন করে সে দেশে মেয়েদের জন্মানোই উচিৎ নয়। পিতৃতন্ত্র নিজস্বার্থে মেয়েদের ত্যাগের গল্প শেখায়,  মেয়েদের লজ্জার পর্দায় মোড়া থাকতে বলে...কেন এরম হবে? প্রত্যেকটা জেন্ডারের মানুষ তো মানুষই, প্রত্যেকের জন্য আলাদা নিয়ম কেন হবে?  কারণ আমাদের দেশ এখনও সাবলম্বী হয়নি, যে দেশে বাস্তব থেকে সিনেমা সর্বক্ষেত্রে  কেবলমাত্র পুরুষ যৌনতাকে তোষামোদ করার জন্য মেয়েদের একটা পণ্য হিসেবে দেখা হয় সে দেশ প্রাপ্তমনস্ক হবে কিভাবে? মেক-আপ যে মেয়ে করতে ভালোবাসে করুক না, যে বড় চুল রাখতে চাইছে রাখুক না, যে নিজের চুল কেটে ফেলছে ফেলুক, সেল্ফিক্যামেরায় ফিল্টার ইউস করছে করুক, এটা তাদের ব্যপার বাকিরা বলার কে? কেউ নয়, জাস্ট কেউ নয়। কেউ পাত্তা দিচ্ছেনা আপনার মতামতে।  যে রাষ্ট্র, শতাব্দীভর পিতৃতান্ত্রিক... সে তন্ত্রের অভিধানে 'খানকি' এবং 'খানকির ছেলে' এই দুই গালি হয়,  সেই রাষ্ট্রে  নারীসমধিকার নারী স্বাধীনতা একটা মিথ এবং নারীবাদ ও নারীদিবস একটা ইওটোপিয়া বই আর কিসসু না!            

No comments:

Post a Comment