HAPPY READING...


Wednesday, 5 August 2020

৩৭০ প্রত্যাহারের এক বছর, রামমন্দির এবং অবিচ্ছেদ্য ভারত

আজ উৎসবের দিন, হ্যাঁ উৎসবই বটে!  যখন সারা দেশে 15 লাখের বেশি এক অসুখে আক্রান্ত, যখন 40 হাজারের কাছাকাছি মানুষের মৃত্যু হয়েছে, পড়তে থাকা অর্থনীতির কারণে কোটি কোটি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন, অনেকেই অবসাদে আত্মহত্যা করেছেন, অনেকের মৃত্যু হয়েছে বাড়ি ফেরার পথে...ঠিক তখনই উৎসবের সময়! মন্দির উৎসব...ক্ষমতা প্রদর্শনের উৎসব । এক ধ্বংসের খেলা চলছে, অন্যায়ের তালিকা একটু একটু করে বাড়ছে আর আমরা সেই শেষের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, যেখান থেকে ফিরে আসার কোনও পথ নেই ।

 

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময়ে আমার জন্ম হয়নি । সেই সময়ের রাজনৈতিক সমীকরণ নিয়ে অতটাও অবগত নই, পড়েছিলাম কেবল । যতদিনে রাজনৈতিক চেতনা হয়েছে, কলেজের সেই দিনগুলোর থেকে 92 সালের মধ্যবর্তী দূরত্ব অনেকটাই...সেই সময় বম্বে দেখছি, দেখছি নাসিন । 92-র ওই সময়টার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছি । মনে পড়ে য়ুনিভার্সিটি পড়তে বন্ধুদের মধ্যে একটা বাক্য নিয়ে খুব মজা হত, কিন্তু ভাবিনি সত্যিই এইদিনটা দেখবে ভারতবর্ষ । মন্দির ওখানেই তৈরি বানানো হবে ! মহাকাব্যকে যাঁরা ইতিহাস বলে ভেবে নিয়েছেন, তাঁদের বুদ্ধিমত্তার দৌড় কতদূর তা বোঝা যায় । একটা কাল্পনিক চরিত্রের ভিত্তিতে দীর্ঘ বছরের ইতিহাসকে ধ্বংস করে, জোর করে নিজেদের শক্তি, নিজেদের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করা হল । দেশের আইনকে নিয়ন্ত্রণ করা হল, এই সময় উৎসবের নয় ? অবশ্যই উৎসবের ।

2019 ভারতের সংবিধানের, গণতন্ত্রের দুঃসময় । যখন পুরো দেশ মন্দির গড়ায় মেতেছে, সেই সময় এক কোণায় অন্ধকারে অত্যাচারে যন্ত্রণায় চোখের জল ফেলছে কাশ্মীর । কীভাবে ভুলে যাব, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ?  ঠিক একটা বছর, অথচ আমরা ভুলে গিয়েছি । পাশ কাটিয়েছে কেউ, এখন শিরোনাম রাম জন্মভূমিই । 2019-র 5 অগাস্ট 370 ধারা ও 35এ প্রত্যাহার করা হয়েছিল । বিশেষ মর্যাদা হারিয়েছিল কাশ্মীর, কেন্দ্রশাসিত দুই অঞ্চল তখন সম্পূর্ণ পরাধীন । রাতারাতি ইন্টারনেট, মোবাইল পরিষেবা বন্ধ করে অন্ধকার যে কূপের মধ্যে কাশ্মীরকে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল, সেই কূপে গণতন্ত্র নেই, স্বাধীনতা নেই । আছে ফ্যাসিবাদী শাসন । এরপর সেখানে কত মৃত্যু হয়েছে, কত মানুষ হয়েছে নিখোঁজ আমরা জানি না । মাঝেমধ্যে প্রধানমন্ত্রী এসে বলে গিয়েছেন, কাশ্মীর ভাল আছে! কিন্তু সেই ভাল থাকার সংজ্ঞা কী ?  বেকারত্ব, মৃত্যু, যন্ত্রণা, অত্যাচার, কারফিউ ?  কাশ্মীরে চাকরি নেই; সম্প্রতি একটি রিপোর্ট জানাচ্ছে, যে সাত মাস টানা কারফিউ ছিল কাশ্মীরে, সেই সময় ধসের মুথে পড়ছে কাশ্মীরের অর্থনীতি । প্রভাব পড়েছে ব্যবসায় । এক বছরে প্রায় 40 হাজার কোটির ক্ষতি হয়েছে কাশ্মীরে । ফল? বেকারত্ব, জীবিকাহীন জীবন, লোকসান...কোনও প্রদেশের মেরুদণ্ড ভেঙে দিতে গেলে সবার আগে অর্থনীতি  পরিকাঠামোটাই ভেঙে দেওয়া হয় । কাশ্মীরও সেই সমীকরণের বাইরে নয় । বারবার অধিকারের লড়াই লড়তে লড়তে, আর্থিক অবস্থানের সঙ্গে মানিয়ে নিতে নিতে ওঁরাও ক্লান্ত । পেলেট গান, এনকাউন্টার, অত্যাচার এই সবকিছুর সঙ্গে অতঃপ্রতভাবে কাশ্মীরের জীবন জড়িয়ে গিয়েছে । কিন্তু আমাদেরও ভুললে চলবে না, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ।

 

আমরা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের কথা ভুলে যাইনি । আমরা ভুলে যাইনি, বারবার ভারতের সংবিধানকে, প্রত্যেকের সাংবিধানিক অধিকারকে কীভাবে প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়েছে শাসকদল । আমরা ভুলে যাইনি, ধর্মের নামে কীভাবে দেশের মধ্যে বিভাজন রেখা টানার চেষ্টা চলেছে । আমরা ভুলে যাইনি ।  আজ উৎসবের দিন, বর্ষপূর্তির উৎসব । ফ্যাসিবাদী সরকারের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার অন্যতম পদক্ষেপের আজ এক বছর, আজ উৎসব হবে না ? হয়তো খুব সন্তর্পণেই নির্বাচন করা হয়েছে, 5 অগাস্ট । যেই সময় মানুষ কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সামান্য হলেও ভাবত, সেই সময়ই রামজন্মভূমির উদযাপনে মেতেছে দেশ । গণতন্ত্রের আরও এক কালো দিন । মানুষকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, সেখানে প্রতিপত্তির প্রতিষ্ঠা । ক্ষমতার প্রতিষ্ঠান । নবারুণ লিখেছিলেন, এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ না । আমরাও এক সময় ভেবেছি, না এই ভারত সেই স্বপ্নের ভারত নয়...এই দেশ আমার দেশ না । 250 বছরের ঔপনিবেশিক শাসন বিরুদ্ধতার ইতিহাস আমাদের যে সাহস দিয়েছিল, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেইভাবে আমাদের লড়তে শিখিয়েছিল, কাঁটাতারের ক্ষতের উপর নতুন ভারতের স্বপ্ন প্রলেপ লাগিয়েছিল । সেই দেশ একটু একটু করে ধ্বংস হচ্ছে...আর্থিক মন্দা, বাড়তে থাকা বেকারত্ব, সাম্প্রদায়িকতা, দাঙ্গা, মহামারি আরও কত কিছুর সঙ্গে লড়ব আমরা ?  একদিকে দেশ ধ্বংস হচ্ছে, আর একদিকে গড়া হচ্ছে মন্দির ! ইটের গায়ে রাম-নাম । একটা একটা ইট ক্ষমতার প্রকাশ । অন্যায়ের অভিব্যক্তি । সারা দেশ আনন্দে মেতেছে...আমরাও ভুলে গিয়েছি কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, সেখানে আবার জারি হয়েছে কারফিউ...আবার সেখানে মৃত্যু হচ্ছে কারও । গণতন্ত্রের পতন---মন্দির গঠন । কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ, কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ । সেই দেশে কোথায় যেখানে মুক্তি রয়েছে , স্বাধীনতা রয়েছে ?


ছবি সৌজন্যে - গুগল

1 comment:

  1. শোন তাহলে,
    আমি প্রথম যখন রাম কে নাম দেখি তখন আমার বয়েস 24মত হবে। কয়েকদিন চুপচাপ থতমত হয়ে গিয়েছিলাম। ঐটাই একটা বিরাট ডকুমেন্ট তারপরও এরা কিভাবে এই দেশে রয়ে গিয়ে হিংসা ছড়িয়ে ক্ষমতায় আসে? কি চাই ঘুরে দাঁড়াতে? এত খিদে, এত মৃত্যুতে এদের লজ্জা হয় না।

    ভালো নেই, আমরা ভালো নেই।

    ReplyDelete