HAPPY READING...


Saturday, 11 March 2017

মনুষত্বের নির্দিষ্ট রং হয়না

আমার প্রিয় উতসবের যদি একটা তালিকা বানাই তবে সেখানে বইমেলার পরেই এই আজকের দিনটা থাকবে। জানিনা সবাই পায় কিনা কিন্তু রঙ আসার কিছুদিন আগে থেকে একটা রং রঙ গন্ধ পাই। যেমন অনেকে বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ পায় বলে দাবি করে, সত্যি বলতে আমি পাইনা কিন্তু রঙের ক্ষেত্রে পাই! খারাপ লাগছে এই ভেবে আরো একটা রঙ পেরিয়ে এলাম, কিন্তু এবারো এত এত রঙের ছবি তোলা হলনা। এত আবির এত মুখোশ, শহর থেকে শহরতলি যেদিকেই তাকানো যায় শুধু রঙ... সেসব শুধু চোখ বন্ধ করলেই দেখতে পাব কিন্তু ক্যামেরার এলসিডি-তে দেখতে পাবনা। ভিউ ফাইন্ডারে চোখ রেখে রঙগুলোকে দেখা হলনা...এই বছরেও না! প্র‍্যাক্টিকাল এক্সাম তার প্রজেক্ট এই নিয়ে সময়টা ধার বেয়ে চলে গেল, কিন্তু ডেকে দিয়ে গেলনা! ডেকে দিয়ে গেলে হয়তো কিছু ছবি তুলে রাখতাম...কাল সকালে কিছু কাজ নিয়ে বেরিয়েছিলাম এই যেমন মাছের ওষুধ কেনা, ছাতা সাড়ানো আরো টুকিটাকি... একটি বাচ্ছা মেয়েকে রাস্তার ওপার দিয়ে যেতে দেখলাম আমি সাইকেল নিয়ে রাস্তার এপাশে দাঁড়িয়ে।মেয়েটি দাদুর হাত ধরে যাচ্ছে আর এক হাতের প্লাস্টিকে করে অনেকগুলো রং নিয়ে যাচ্ছে। সে প্যাকেটটা এত দোলাচ্ছে যে তার মনের উতফুল্লতা সেই দুলুনিতে স্পষ্ট। আমার ইয়োগা ক্লাসের একটি বাচ্ছা ছেলেকে দেখি বাবার সাথে রঙের দোকানে দাঁড়িয়ে আছে, আর পৃথিবীর সমস্ত ইনোসেন্স মুখের রেখায় জড়ো করে বাবাকে বলছে, বাবা ওইটা কিনে দেবে তো? তার মুখের দিকে তাকাতে গিয়ে তার বাবার দিকে আর দেখা হয়নি। ২৪*৭ নিউস চ্যানেলগুলো কাল আমার বাড়িতে ২৪*৭ চলেছে। আমার চোখ ঠায় ল্যাপটপের স্ক্রিনে ছিল, কান ছিল টি.ভি - এর ঘরে। কেমন একটা মনে হচ্ছিল,  বোধ হয় রাষ্ট্রের সংবিধানে  ধর্মনিরপেক্ষ কথাটা খুব কম সময়ের জন্যেই আর রয়েছে। কিংবা 'রাষ্ট্রদোহী আইন'-এর প্রয়োগ দিনে দিনে বাড়তে থাকবে। মাঝেমধ্যে হাইক নিউস আপডেট ঢুকছিল, সব জায়গায় একটানা একইরকম। আমি বারবার এসে ঘুরে যাচ্ছিলাম টি.ভি-এর সামনে থেকে কিংবা বাবা আমার ঘরে এসে আপডেট দিয়ে যাচ্ছিল। ইউপি ইউপি ইউপি। এর থেকে বড় আর ভারি  দুটো লেটার ইংরাজি বর্ণমালায় কই? গেরুয়া আবিরের প্রয়োগ সর্বত্র, টিভি চ্যানেলগুলোতেও একই কথা বলছিল...নিউস পেজগুলোতেও শুধু গেরুয়া আবিরের ছবি...হোলির আগাম উদ্যোগ। আমার ভালো লাগছিল না, গেরুয়া আবিরের এইরূপ আবির্ভাব মেনে নিতে পারছিলাম না! রং তো সবার, রং তো সবার জন্য সেখানে একপেশে অসংখ্য মানুষ একে নিজের করে নিতে পারেনা!  কাল সমস্তদিন এরকম একটা না ভালো লাগার মধ্যে কেটে যায়...সারাদিন বসে প্রজেক্ট করতে হয়েছে...বড় হওয়ার সাথে সাথে কিংবা মানুষ বিশেষে রঙের মানেও কেমন পালটে যায়! ছেলেবেলার রঙ, প্রেমের রঙ, বসন্ত উতসবের রঙ এসব কিছু আমার রাজনীতির রঙের থেকে অনেক বেশি ভালো লাগে। সেইমত চলতে ভালো লাগে। রঙের দিন আজ, সকাল বেলা ঠাম্মার কাছে শান্তিপুরের দোলের কথা শুনছিলাম, হ্যাঁ শান্তিনিকেতন নয় শান্তিপুর...যদিও সে গল্প মুখস্থ তাও বার বার শুনি ভালো লাগে তাই! এখন সকাল গড়িয়ে দুপুরের দিকে, আশেপাশে অনেক বাড়ি পুজো হচ্ছিল, কানে আসছে হুল্লোর। কোথাও জোরে জোরে গান বাজছে, আর এর পাশাপাশিও কিছু শব্দ আছে যা কেবল আমি পাই... বসন্তের শব্দ, আনন্দের শব্দ, রঙের শব্দ...এই সব শব্দ অন্তত গতকালের ভালো না যাওয়া দিনটার থেকে ভালো! রঙের দিন ঘরে বসে থাকলে মন খারাপ করে, বসন্ত উতসবে অংশ না নিতে পারলে মন খারাপ করে, পড়ার চাপে এবারেও ছবি তোলা মিস গেল বলে মন খারাপ করে কিন্তু কালের মন খারাপ ছিল অনেক বেশি। কারণ রঙের একপেশে ব্যবহার দেখতে পারিনা, কারণ অপ্রিয় স্লোগান শুনতে পারিনা। কারণ 'রমজান vs দীপাবলি' -তে বিশ্বাস করতে পারিনা, ধর্মের পতাকার কোনো রং হোক তা ভালো লাগেনা! এখনো বিশ্বাস করি রং সবার, সকলের... আনন্দ সবার! মনুষত্বের কোনো নির্দিষ্ট রং হয়না। বিভাজনের গন্ধ ভালো নয়, সবাই নিক তা চাইনা... তার চেয়ে  আবিরের এক মিষ্টি গন্ধ আছে, সবাই বরং সেই গন্ধ নিক। শুধু আজের জন্য নয়, সব সময়ের জন্য! শুভ রং উতসব!

No comments:

Post a Comment