HAPPY READING...


Thursday, 25 June 2020

বুলবুল : এক ডিসটোপিয়ান রূপকথা এবং নারীবাদ



বুলবুল ছবি মূলত যে আখ্যান নির্ভর, সেই গল্পটা আমাদের সবার জানা । সেই গল্পটা আমাদের ঠাকুমা বা দিদিমারা করে থাকেন । এক গ্রামে এক ডাইনির গল্প... একটা রূপকথা, কিংবা একটা ডিসটোপিয়া । একটি চরিত্র নির্ভর গল্প, যে চরিত্রটি গল্পের অন্ধকার অংশগুলো আরও অনেক বেশি স্পষ্ট করে তোলে । এখন বিষয়টি হচ্ছে, দৃষ্টিকোণ বা পার্সপেক্টিভ । বুলবুল হয়তো সেই পার্সেপেক্টিভ নিয়েই প্রশ্ন তৈরি করতে চেয়েছে । একটা ডাইনি যার দুটো ডানা রয়েছে, বা একটা পরী যার পায়ের পাতা উল্টো ... আমরা কোন নারীর গল্প পড়ছি ?




এই ছবির আখ্যান পরিকাঠামোয় সময় একটা বড় চরিত্র পালন করে । কখনও 1881 সালে ফিরে যাই আমরা, কখনও তার 20 বছর পরের সময় দেখি আবার এরই মধ্যে পাঁচবছর পূর্ববর্তী সময়ে বর্বরতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে । এই সময়রেখা বুলবুলের(ছবির প্রধান চরিত্র, তার নামেই ছবির নাম) স্মৃতি । বারবার নৃশংসতার সেই অতীতকে ফিরে দেখে সে ।


1881 সাল । অবিভক্ত বাংলা । বুলবুলের বিয়ে হয় এক ঠাকুর পরিবারে । তখন তার বয়স খুব বেশি হলে দশ বছর হবে । অন্যদিকে তার স্বামী তার থেকে অনেক বড় । বুলবুল বুঝতেও পারে না, তার সঙ্গে কী হচ্ছে । বুলবুল বুঝতে পারে না তার স্বামী কে ?  তারই বয়সী তার ছোটো দেওরকে সে তার বর ভেবে বসে । এরপর সময় এগোয়... উচ্চবিত্ত ঠাকুরবাড়ির পিতৃতান্ত্রিক অন্দরমহল একটু একটু করে বেঁধে ফেলে বুলবুলকে । মনে করিয়ে দেয় তার বিয়ের সন্ধ্যার কথা... যখন তার পিসি তার পায়ের আঙুলে গহনা পরানোর সময় বলেছিল, এটা পরানো হয় স্নায়ু নিয়ন্ত্রণের জন্য, যাতে পাখি উড়ে না যায় ছোট্টো বুলবুলও জিজ্ঞাসা করে, পিসিমা নিয়ন্ত্রণ করা কী ? কারণ পাখির মতো একটা প্রাণ তখন জানেও না   উচ্চবংশীয় হিন্দু পরিবারের অন্দরমহলের দেওয়ালে কটা অদৃশ্য লোহার শিকল বাঁধা আছে । 
ছোটো বয়সে বুলবুলের অভিনয়ে রুচি মহাজন

বুলবুলের চরিত্রে তৃপ্তি দিমরি


অন্দরমহল নিয়ে আলোচনা শুরুর আগে অন্য একটি ছবির প্রসঙ্গে লিখতে খুব ইচ্ছে করছে । অন্দরমহলের নিপীড়ণ, বাঁধন, যন্ত্রণা, অত্যাচার তো কখনও পরিবর্তন হয় না । আখ্যান বিশেষে সময় ও পরিসর পাল্টে নেয় কেবল । ঋতুপর্ণ ঘোষের অন্তরমহল আমাদের এক জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যের আড়াল করা বর্বর পিতৃতন্ত্রের চেহারা দেখিয়েছে । আমরাও দেখেছি, কীভাবে নিজ স্বার্থে পর্দার আড়ালে রাখা গৃহিনীকে ব্যবহার করে এসেছে একটা পরিবার । পিতৃতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যবাদ আমাদের পূর্ব পরিচিত । কীভাবে প্রতি মুহূর্তে হিন্দু সমাজ একজন মেয়ের যৌনতা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেছে, কী কী বর্বর, কুৎসিত পদক্ষেপ করেছে তার একাধিক দৃষ্টান্তর সঙ্গে পরিচিত আমরা । অনভিতা দত্তর বুলবুল সেই অন্দরমহলের পরিসরকেই আবার দৃশ্যায়িত করে । একটা রূপকথার আড়ালে লেখে নারীবাদী উপকথা ।


ইন্দ্রনীলের(অভিনয়ে রাহুল বোস, যিনি ছবিতে দুইটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন) সঙ্গে বিয়ে হলেও আসলে দেওর সত্যকেই (অভিনয়ে অবিনাশ তিওয়ারি)ভালবেসেছিল বুলবুল(অভিনয়ে তৃপ্তি দিমরি) । যে তাকে সেই ভয়ের গল্প শোনাত, এক ডাইনির গল্প শোনাত । সত্যর সঙ্গে দিনযাপন, একসঙ্গে বেড়ে ওঠাকে বুলবুল অজান্তেই জীবন বানিয়ে নেয় । এরপর একদিন বিচ্ছেদ আসে । এই বিচ্ছেদ আমাদের পূর্বপরিচিত । বৈষ্ণব পদাবলীর রাধা বিরহ এই বিচ্ছেদ যন্ত্রণা আমাদের অনেক আগেই অনুভব করতে শিখিয়েছে । কারণ ছবির সঙ্গীত রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের গল্প বলে । সত্যর প্রতি বুলবুলের অনুভূতির কথা জানতে পেরে, সত্যকে বিলেতে পড়তে পাঠিয়ে দেয় ইন্দ্রনীল । আর বুলবুল সদ্য খসে পড়া তারার ভাঙা টুকরোগুলো কুড়িয়ে নিতে থাকে । পুড়িয়ে ফেলে ভালবাসার উপন্যাসের পাতা, এই আগুন বুলবুলের আত্মাকে ছিন্নভিন্ন করেছিল । বিরহ যন্ত্রণায় ডানা কাটা পরী অন্দরমহলে গুমরে মরেছিল । এক জানলা থেকে অন্য জানলায় ছুটে বেরিয়েছিল মুক্তির জন্য, কিন্তু সে তখনও জানত না অন্দরমহলের অদৃশ্য শিকলে ইতিমধ্যেই তার পা বাঁধা পড়েছে ।

ভয়রা কথা রাখে । জটায়ুর ডানা কেটে দেওয়ার মুহূর্তের চিত্রপট লেইট মোটিফ হয়ে ওঠে, পরীর ডানার ভাঙা অংশের রক্ত বা ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া গোড়ালি থেকে রক্ত বেরিয়ে ছিটকে লাগে অন্দরমহলের দেওয়ালে । চিত্রপটের উপর, ঐতিহ্যের গায়ে । ইন্দ্রনীলের চোখেমুখে । সেই দৃশ্যের একটাই রং... লাল । খসে যাওয়া ডানার যন্ত্রণা অনুভবের আগেই অচেতন হয়ে যায় পরী, ঘুম ভাঙে আরও এক নৃশংসতার ভোরে । অন্দরমহলের বড় বড় পালঙ্কে তখনও রক্তের দাগ শোকায়নি । চিকিৎসক সুদীপ(অভিনয়ে পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়) সবেই সেই ক্ষতে প্রলেপ লাগিয়ে গিয়েছে । পিতৃতান্ত্রিক বর্বরতায় , যৌন অত্যাচারে পরীর যোনি থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয় । মৃত্যু হয় মুক্তির, মৃত্যু হয় ডানার । মৃত্যু হয় ইওটোপিয়ান রূপকথার । দৃশ্যে ফিরে আসে লাল রঙ । আকাশে লাল চাঁদ দেখা যায় । জন্ম হয় আরও এক পরীর, তবে তার ডানা নেই । আছে উল্টানো পা, ঔদ্ধত্য এবং নিয়ম ভেঙে বেরিয়ে আসার সাহস । পরজন্মে পালঙ্কের চারপাশে কাশবন, আর লাল রং । সেই রং রক্তের না আন্দোলনের না রূপকথার তা জানি না । 




ছবির আরও এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র বিনোদিনী (অভিনয়ে পাওলি দাম)। বুলবুলের জা, ইন্দ্রনীলের জমজ ভাইয়ের স্ত্রী । যে বুলবুলের থেকে অনেক বড় হলেও তাকে বুলবুলকে বড় বউ বলে ডাকতে হয় । বিনোদিনী সেই নারী যে অন্দরমহলের মধ্যে থাকতে থাকতে নারীবিদ্বেষকে ইতিমধ্যেই গলদ্ধকরণ করেছে । বুলবুলের উপর অত্যাচারের পরও বুলবুলকে চুপ করে থাকতে শেখায় সে । তার সংলাপে আসে বশ্যতা ।


সময় আবার বছর 20 পর । বিলেত ফেরত সত্য সুদীপের সঙ্গে বুলবুলের বন্ধুত্ব দেখে হিংসা করে । তার পৌরুষ তাকে বর্বর বানায় । সুদীপ বুলবুলের পায়ের চিকিৎসা করার সময় সত্য সেখানে চলে আসে  এবং বুলবুলকে কটাক্ষ করে বলে, বৌদি আপনি নিজেকে পর্দার আড়ালও করেননি । তার প্রত্যেকটা কথায় ফিরে আসে পুরুষত্বের হিংস্রতা । বৌদির প্রতি সন্দেহ, নিয়ন্ত্রণ । এরই মধ্যে গ্রামে একটার পর একটা নৃশংস খুন হতে থাকে । সবাই ভাবে, সেই ডাইনি এসে খুন করে রক্ত খাচ্ছে । খুন হয় ইন্দ্রনীলের ভাই, খুন হয়ে যায় গ্রামের মাস্টার । সত্য সত্যের সন্ধান করে  । সেও খুঁজে বের করতে চায় কে এই খুন করছে । অন্তত, সে বিশ্বাস করত কোনও ডাইনি নয় , এই খুন মানুষের । অন্তত কোনও পুরুষ মানুষ...কারণ একজন নারী এত নৃশংস হতে পারে না ।


তার কথার সঙ্গে কন্ট্রাস্ট তৈরি করে ছবির দৃশ্য । হিন্দু পুরাণের দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় । লাল রং এবং কালীপুজোর রাত ... আলো আঁধারি একটি খুনের স্মৃতি ভুলতে না ভুলতেই অন্য একটি খুন হয়ে যায় ।

ডাইনি নিয়ে যে গল্প কথা প্রচলিত রয়েছে, তা অবশ্যই পিতৃতান্ত্রিক । একজন মেয়ে যাকে অন্তত সমাজের নিয়মে বেঁধে ফেলা যায়নি তাকে ডাইনি বলে সম্বোধন করা হয়েছে যুগযুগ ধরে । ডাইনি সন্দেহে নির্দোষ মেয়েদের পুড়িয়ে মারার একাধিক খবর আমরা জেনেছি, কিন্তু আমরা কিছু করিনি । নৃশংসতাই কি ডাইনির আসল পরিচয় ? সে রক্ত খায় , সে মানুষ খুন করে ? কোনও দেবীও কি রক্ত পান করেননি ?

ডিসটোপিয়ান এক আখ্যান কাঠামো আমাদের আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলে । জোর করে দেখানো হয় নৃশংসতা, যন্ত্রণা, মৃত্যু । ছবির সঙ্গীত এবং উগ্র রঙ ভয়ের গল্প বুনন করে । এইদিকে ছবির সিনেম্যাটোগ্রাফি, আলোর ব্যবহার, আর্ট ডিরেকশন বাস্তবেই এক পরাবাস্তববাদের ছবি আঁকে । সেখানে কখনও জানলা দিয়ে লাল আলো এসে পড়ে, কখনও বুলবুলের পালঙ্কের চারপাশে ভরে ওঠে কাশবন । আবার অত্যাচারের যন্ত্রণা আগুন হয়ে পুড়ে যায় কোনও দৃশ্যে ।

তবে ছবির ভয়ের জায়গাটা ঠিক কোথায়, অর্থাৎ ছবির যে জঁরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে--- হরর । সেই ভয়টা কোথায় ? ডিসটোপিয়ান রূপকথায়, বাংলার ইতিহাসে, খুনের নৃশংসতায় না কি জমিদার বাড়ির অন্দরমহলের নিষ্ঠুর বর্বরতায় ? না কি সেই ডাইনির উল্টানো পায়ের পাতায় যেখানে পুরনো রক্তের দাগ লেগে রয়েছে ?


ছবির দৃশ্যপট, চিত্রনাট্য হয়তো আরও মজবুত হতে পারত । ঔদ্ধত্য ভয় দেখাতে পারত অন্দরমহলের কুঠুরিতে । নিজেকে পর্দার আড়াল থেকে বের করে আনা জমিদার বংশের গৃহিনীর চরিত্রের শাখা প্রশাখা আরও দূর বিস্তৃত হতে পারত । নারীবিদ্বেষী , ক্রীতদাসের মতো চরিত্র বিনোদিনী । সেই চরিত্রের শিকড়ে পৌঁছানো যেত । কিন্তু সেইসব ছবিতে হয়নি, বরং দাবানল এবং উগ্র লাল রঙ এইসব সত্যিকে ছাপিয়ে গিয়েছে কোথাও । ফিরেছে রূপকের জন্ম-মৃত্যু... পরাবাস্তববাদ স্মৃতির চৌকাঠে একাকিত্বের পাশে দাঁড় করিয়েছে ইন্দ্রনীলকে । তখন জমিদার বাড়ির উঠোনে শুধুই কাশবন । যেন শরতের সময়, যেন ষষ্ঠীর শুভ লগ্নে অকালবোধন । চক্ষু দান হবে দেবীর, তিনি অস্ত্র তুলে নেবেন । মাথা কেটে নেবেন আরও এক অত্যাচারীর...রক্ত পান করবেন তারপর ।  উল্টানো পায়ের পাতায় তখনও শুকনো রক্তের দাগ, দাবানলেই চিরন্তন সেই পরীর উপাখ্যান ।


ছবি সৌজন্যে - নেটফ্লিক্স এবং গুগল । (প্রত্যেকটি ছবি বুলবুল ছবি থেকে সংগৃহীত)

Thursday, 18 June 2020

নক্ষত্রপতন এবং বৃষ্টিবিকেল

যতবার শহর ছেড়ে এসেছি, একটা দুঃস্বপ্নের কথা মনে পড়েছে । সেই এক অদ্ভুত দুঃস্বপ্ব, যার কোনও শেষ নেই । একটা শুরু আছে কেবল । অন্তহীন এক দুঃস্বপ্নের মধ্যে রয়েছি । মাকে ছেড়ে থাকার কষ্ট এবং শহর ছেড়ে আসার অনুভূতিটা অনেকটা একরকম । আমার দোতলার ঘর, বারান্দার ফুল গাছ আর কাচের ভিতর রাখা রঙিন মাছ এসবই বাড়ি ছেড়ে আসার আগে শেষবারের জন্য স্মৃতির সঙ্গে সময় কাটাতে জোর করে । আমাদের নিচের ঘর, বাবার শার্টের বোতাম অনেক পুরাতন হয়েছে । তার থেকেও পুরাতন হয়েছে বার্মা সেগুনের খাটটা । যদিও আমার কাছে সবথেকে পুরাতন নিচের ঘরের আলমারিটা, যার মধ্যে রাখা মায়ের গন্ধ । যে শাড়িগুলো ছুঁলে মনে হয় মাকে ছুঁয়ে দেখলাম । মায়ের চেয়ে আদিম এই পৃথিবীতে কী আছে, আমার জানা  নেই ।


আজও এইখানে বৃষ্টি এল । বিকেলে কাজ করার সময় মেঘ করে এল , মনে হল এইতো মন খারাপ আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চোখের জলে নৌকা ভাসানো যাবে । হঠাৎ করেই বাড়ি ছেড়ে আসার দিনটার কথা মনে পড়ল । ভোরবেলা এয়ারপোর্ট যাওয়ার জন্য যখন গাড়িটা পাড়ার মধ্যে থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই সময়টা । আমি পিছনে ঘুরে বাবাকে দেখার চেষ্টা করছি, যতদূর বাবাকে দেখা যায় । বাবাও দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে । এর থেকে যন্ত্রণার সময় আর হয় কি, জানা নেই । আমার ঠাম্মার সঙ্গে গল্প, আর নির্ভেজাল সন্ধ্যাগুলোর কথা মনে পড়ল । আমি কাগজের নৌকা বানালাম । বৃষ্টি নামতেই স্মৃতির নাম ওদের গায়ে লিখে ভাসিয়ে দিলাম, ওরাও নিজের মত ঠিকানা খুঁজে নিচ্ছিল । কেউ মায়ের শাড়ির আঁচলে মুছে নিচ্ছিল চোখ, কেউ বাবার সবথেকে পুরাতন শার্টের বোতাম চুরি করে পকেটে ভরছিল, কেউ ঠাম্মার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ছিল কিছু না ভেবেই । আমি দরজায় দাঁড়িয়ে ঠায় বৃষ্টির জলে ভাসছি, আর দেখছি নৌকারা খুঁজে নিচ্ছে নিজেদের ঠিকানা । আমি এখনও বুঝিনি, আমায় হায়দরাবাদের ফ্ল্যাটের ছাদ বেশি প্রিয় না কি বাড়ির বারান্দা । আমার বইয়ের তাক বেশি প্রিয় না কি এক কামরার ভাড়ার এই ছোট্টো ফ্ল্যাটটা । আমি বুঝিনি আমার প্রিয় বন্ধুর নাম কী, আমি এখনও খুঁজে পাইনি আমার প্রেমিকের ঠিকানা । শুধু জানি, কোনও এক পাহাড়ি গ্রামে সেও তাঁর গিটার কাঁধে মেঘলা দুপুরের গান গায় । তারা দেখে রাতের আকাশ, বৃষ্টি হলে ছাদে ঘুরে আসে । আর জোৎস্নার রাতে ফিরে যায় জঙ্গল । আমি এখনও নিজেকে খুঁজি । বইয়ের পাতায়, খবরের নৃশংসতায়, আর রাত জাগা ফোনে । হয়তো আমিও সেই মনটাই হতে চেয়েছিলাম যে হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে । যার নাম হারিয়ে গেছে হাওয়ায় ।

 

এই বর্ণবিদ্বেষের পৃথিবীতে... দারিদ্র, যন্ত্রণা, বেকারত্ব, আত্মহননের পৃথিবীতে... এই অসাম্য আর ক্ষমতার লড়াইয়ে দুটো ডানার প্রয়োজন ছিল । যে ডানা দুটো বৃষ্টির জলেও ভেজে না । যে পাখিরা উড়ে যায় ঘর ছেড়ে, ফিরে আসে আরও এক দুই তিন শতক পর । আর পুরাতন গানদের বন্ধু বানিয়ে প্রত্যেকের রূপকথার গল্প লেখে তারাই । রাজকুমারির জন্য দেড়শো বছরের পুরাতন গান নিয়ে হেঁটে বেড়ায় পথিক  প্রেমিক । বাঁশি বাজায় আপন মনে, কিন্তু তাঁদের দেখা হয় না । অথচ, নন্দিনী ও বিশু পাগলের মত তারাও চিরন্তন । হয়তো সেই রূপকথা এখনও লেখা বাকি । এখনও বৃষ্টি আসা বাকি আরও অনেক । এখনও জোনাকিদের ঘুমাতে যাওয়া বাকি । এখনও সব তারারা পড়েনি খসে ।

 

কিন্তু আমরাও স্বপ্ন দেখবই । আমরা বলবই--- ভাবো, যে পৃথিবীতে কোনও দেশ নেই । মাকে ছেড়ে থাকার দুঃখকে সঙ্গে নিয়ে থাকব, কারণ অনেক দুঃখ যা ভোলার মত দুঃখ নেই । কয়েকটা যন্ত্রণা আপন হয়, শীতের সেই দুঃস্বপ্ন়টাও সেই একইরকম । যাকে ভোলার জন্য এখনও বৃষ্টি হলেই শহর টানে, এখনও মেঘলা আকাশ উড়িয়ে আনে চিঠি । আমি একের পর এক নৌকা ভাসাই, ট্রলি ব্যাগ থেকে বের করে নিই মায়ের শাড়ি । জানি, ঘুম থেকে উঠেই দেখব মা ফিরে এসেছে আরও এক মেঘলা বিকেল হয়ে ... খসে গিয়েছে আরও একটা তারা ... টবের গাছে নতুন ফুল এসেছে পরবর্তী সকালে ...