HAPPY READING...


Wednesday, 20 July 2016

পেজ থ্রি সাংবাদিকতা - এক বিতর্কিত গৃহীত বিষয়

সাংবাদিকতার নতুনধারায় যেভাবে মানুষের শরীর , যৌনতা ও ব্যক্তিগত জীবনকে টেনে আনা হচ্ছে ও এই ধরণের ছবি ও লেখার প্রকাশ করার প্রবণতা যেভাবে বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর বিশ্বাস হারাচ্ছেন, প্রশ্ন উঠছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে। যদিও সংবাদপত্রগুলির পেজ থ্রি সাংবাদিকতার দিকে ঝোঁকার পেছনে যে খুব স্বাধীনতা আছে তা নয়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যে ডুয়াল ইকোনমিতে আটকা পড়ে। বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য সংবাদপত্রগুলি যে তাদের প্রচার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পেজ থ্রি-কে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে চাপ থাকছে ক্রসমিডিয়া মালিকানার। স্বাধীনতার লাগামটা ধরা থাকছে বড়ো বড়ো বিজ্ঞাপনদাতা এবং ব্যবসাদারদের হাতে। তারা ঠিক করে দিচ্ছে সংবাদপত্র কি প্রকাশ করবে কি করবে না! তাই যে সংবাদপত্র স্বাধীনই নয় তার স্বাধীনতার ব্যবহার অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করা যায়না! পেজ থ্রি সাংবাদিকতা তারই এক নিদর্শন মাত্র। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে সেসব হিসেব জটিল। তারা দাবি করছে সংবাদপত্রকে যতটা স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে সে ততই রাজনৈতিক বিশ্লেষন থেকে সরে যাচ্ছে ঝুঁকছে পেজ থ্রি সাংবাদিকতার দিকে।
১৯(১)(ক)-এর বাক ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার ভিত্তিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলা যায়। বাক স্বাধীনতার পাশাপাশি যখন মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার কথাও আসে তখনই অন্য এক ব্যক্তির উপস্থিতি ধরে নেওয়া হয় যাকে নিজের মত হস্তান্তর করা হয়। অর্থাৎ ১৯(১)(ক)-এ জ্ঞাপনের স্বাধীনতার কথা বলা হয়। সেক্ষত্রে দেখতে গেলে, কোনো মানুষ বা প্রতিষ্ঠান তাঁর ইচ্ছা ও চাহিদা অনুযায়ী মুদ্রণ প্রযুক্তির সাহায্যে কোনো কিছু ছাপার বা প্রকাশের অধিকার রাখেন। (মানহানির ব্যতিক্রম মেনে – সরল বিশ্বাসে জনস্বার্থে প্রকাশ করেন। অশ্লীলতা আইন অনুযায়ী যা অমার্জিত(Vulgar)তা প্রকাশ করা আইনত অপচরাধ নয়, ভালগারিটি আর অবসিনিটির মাঝে একটি বিভাজন রেখা আছে)।
এর পাশাপাশি ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা তত্ত্ব’ -কেও সংবাদপত্রগুলি এড়িয়ে গেলে চলবেনা। সামাজিক দায়বদ্ধতাতত্ত্বের মৌলিক বিষয় হল স্বাধীনতা ও গ্রহনযোগ্যতার মধ্যে সম্পর্ক। ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা তত্ত্ব’ বিশ্বাস করে যে গণমাধ্যম সমাজে একটা ভারসাম্য রক্ষা করে চলবে। সমাজের দর্পণ হয়ে উঠবে গণমাধ্যম।
সংবাদপত্রগুলিকে সেদিকটিও মাথায় রাখতে হবে যে তাদের গনতান্ত্রিক সমাজের প্রতি একটি দায়িত্ব আছে,যেখানে গতান্ত্রিকতার প্রতীক একটি স্বাধীন সংবাদপত্র। (প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন এখানে পরাধীনতা বলতে প্রচার বাড়ানোর কম্পিটিশনের জন্য যে পরাধীনতা ,ক্রস মিডিয়া মালিকানার হাতে বন্দী পরাধীনতার কথা বলা হচ্ছে।) তাই “পাঠকরা কোনটা খাবে?’’ জাতীয় প্রকাশনা এড়িয়ে চলা উচিৎ।
পেজ থ্রি সাংবাদিকতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে মত পেশন করে সে প্রসঙ্গে আলোচনা করার আগে একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করার কথা মনে হল- দিল্লীর একজন আইন জীবি শ্রী অজয় গোস্বামী একটি জনস্বার্থ সংক্রান্ত মাম লায় সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানান যে দেশের কিছু কিছু নামি ও বড়ো সংবাদ প ত্র জন সাধার ণের বিকৃত কাম না পূর নের জন্য এই ধ রণের সাংব দিকতা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৬ সালে ১২ই ডিসেম্বর এই মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট আবেদন কারি আইন জীবিকে ‘অতি সংবেদণশীল’ বলে উল্লেখ করেন। কোর্ট এই মর্মে রায় দেয় যে, যদি কোনো পাঠক সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনো কিছুকে আপত্তিজনক বলে মনে করেন, তাহলে তিনি সেই কাগজ পড়া বন্ধ করে দিতে পারেন।
আবেদন কারীর যুক্তি খন্ডন করে সুপ্রিম কোর্ট জানায় যে এই সংবাদপত্রগুলি তাদের পাঠকদের কাছে একটা সম্পূর্ণ পাঠযোগ্য বিষয় তুলে ধরতে চায়; যেজন্য তাঁর সাম্প্রতক ঘটনা, ক্রীড়া, রাজনীতি এমনকি বিনোদোন এইসব বিষয় সম্বন্ধে পাঠকদের সারা বিশ্বের সর্বশেষ তথ্যাবলী দিতে আগ্রহী। কোর্ট একথাও জানায় যে, শোভনীয়তার মাপ কাঠি মেনে বিনদন মূলক যে বিষয় প্রকাশ করা হয়, তা থেকে জন সাধারণকে বঞ্চিত করা উচিৎ নয়। অবশ্যই একথা মনে রাখতে হবে যে, এই বিষইয়গুলি কিন্তু ছোটো ছেলেমেয়েদের জন্য প্রকাশিত হচ্ছেনা। এই ধরণের লেখা  বা ছবির প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ হল স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যা একেবারে বাঞ্ছনীয় নয়; কারন আমাদের গনতান্ত্রিক পরিকাঠামোর একটা অন্যতম দিক হল স্বাধীন সংবাদপত্র।
তবে একথা ঠিক যে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলিতে প্রচলিত পেজ থ্রি সাংবাদিকতার মান এখনো অতটাও নিচে নেমে যায়নি যেখানে বিকৃত কামনার বিষয় বস্তু প্রকাশিত হয়। সেলিব্রেটিদের ব্যক্তিগত জীবন ঘেঁষা ও টুকটাক সেনসেশন গসিপ নিয়ে রমরমিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলা সংবাদপত্রের পেজ থ্রি সাংবিকতা,জানিনা ভবিষ্যতে এর মোড় কোন দিকে ঘুরবে তবে যে মোড়েই এর গতি বাড়ুক কিংবা শোভনীয়তার সিগন্যাল ব্রেক করুক না কেন যৌনতা ও অপ রাধের অনুপান দিয়ে কাগজের মালিকরা যেভাবে পড়ে যাওয়া প্রচার সংখ্যা অর্থাৎ বিক্রিকে চাঙ্গা করে তোলার কথা ভাবছেন বা ভাববেন, সংবাদপত্র সংবেদনশীলতাকে তুলে ধরুক বা পর্ণ গ্রাফিক আলোচনা করুক ; প্রশ্ন হল এতে লাভ কার হচ্ছে উত্তর একটাই ‘মালিকের’!
 

No comments:

Post a Comment