HAPPY READING...


Friday, 29 July 2016

অবৈধের কাব্যপোন্যাস : ক্ষত

পরিচালক- কমলেশ্বর মুখার্জী।
কাস্টিং-  প্রসেনজিত চট্টোপাধ্যায়, পাওলি দাম, রাইমা সেন, ত্রিধা চৌধুরি, রণদীপ বসু এবং অন্যান্য।

এমন এক অ্যাটস্মোফিয়ারে প্রতিনিয়ত আমাদের শ্বাস বায়ু ঘোরাফেরা করে, যেখানে শ্বাসবায়ুকেও খেয়াল রাখতে হয় হুটপাট কোনো ‘অস্বীকৃত’ মন্তব্য না করে ফেলে! থাকে চিন্তাভাবনার ওপরেও কড়া নজরদারি। নজরদারির মুখ্য আসনে পায়ের ওপর পা তুলে দিব্য বসে থাকে একজোড়া চোখ! সব সময় নজর বোলাতে থাকে সেইসব শব্দের লিস্টে, যে শব্দগুলো কখনোই জনসম্মুখে বলা উচিৎ নয়! এই একজোড়া চোখ,যার অধিকর্তা সিস্টেম, কিংবা মেজরিটি? আচ্ছা এই সিস্টেমকেই যদি একটা শরীর হিসেবে ভেবে নিই; তাহলে তারও আর চার পাঁচটা মনুষ্য শরীরের মত আছে হাত,পা,চোখ,নাক, মুখ ইত্যাদি এবং ক্ষিদে, রাগ, ঘেন্না, আনন্দ, দুঃখের মত বেসিক কিছু অনুভুতি। ‘কখনো প্রকাশ করা উচিৎ নয়’ লিস্টিকে যদি সঙ্গে করেই এই একই লাইন আবার লিখি? তবে দাঁড়ায় এই শরীরের ও হাত ,পা, চোখ, নাক,মুখ এবং  আছে যৌনাঙ্গ! আনন্দ,দুঃখের মত যৌনতাতেও সমান গুরুত্ব দিতে হয়, বলা উচিৎ দিতেই হয়! পার্থ্যকটা চিন্তাভাবনার সেনসরড ও আন সেনসরড ভার্সানে! যেটা আমি ভাবছি সেটা প্রকাশ করতে পারব কিনা তার জন্য চেয়ে থাকতে হয় নজরদারির সেই অধিকর্তার দিকে! এক ধরণের চলতি জড়তা!

‘ক্ষত’ এমন একটি ছবি যা নজরদারির অধিকর্তার ছড়ির আঘাতের দাগ পিঠে নিয়েও চলতি জড়তাকে কাটিয়ে উঠে সহজ সত্যগুলো বলে, শরীরের সত্যগুলো বলে, চাহিদার সত্যিগুলো বলে, সেক্স ইস আ বেসিক নীড! বয়ঃসন্ধিক্ষন থেকে ক্ষিদে,আনন্দ, দুঃখ ছাড়াও ‘যৌনতা’ নামক যে অনুভূতিটিকে শরীর লালন-পালনের দায়িত্ব নেয়, সেই সত্যিটি সবার সামনে বলার আগেই যেন মনে হয় হাজার দুটো চোখ ভাবনা প্রকাশের দিকে রূঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, গন্ডিবদ্ধ মস্তিষ্ক বারবার রিমাইন্ডার দিতে থাকে ‘সেক্স’ শব্দটি হুটপাট অটো,বাস-এ কিংবা লোকালয়ে উচ্চারণ করতে নেই। পাশাপাশি একথাও সত্য যে মধ্যবিত্ত বাঙালি কাপেল-এর বন্ধ দরজার ওপাশের প্রাইভেসি আড্ডার আলোচনা, হাসির খোড়াক হয়ে ওঠে।

যে রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন হাঁটাচলা করতে হইয়...সেখানে ফোনের ওপাশে গার্লফ্রেন্ড থাকলেও চোখজোড়া অটোয় বসা অচেনা সুন্দরীর দিকে তাকিয়ে থাকে, কিংবা পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া ‘ডবকা’ মেয়েটির দিকে! প্রেমিকা বা স্ত্রী-র স্তন ছোঁয়া হাত ইচ্ছা করেই রাস্তার অচেনা মেয়ের স্তনে ঘষা খায়!(আমি জেনারেলাইসড করছিনা)...
নতুন ঠোঁটকে আপন করার সময় কি পুরাতন ঠোঁটজোড়ার স্বাদ মনে পড়েনা? হয়তো পড়ে কিন্তু কেউ প্রকাশ করিনা। সেইক্ষেত্রে নির্বেদ লাহিড়ী(অভিনয়ে-প্রসেন জিত চট্টোপাধ্যায়) যদি জানান, “ আমি তোমাকে ভালোবাসি সৃজিতা, কিন্তু আমি অন্তরাকেও চাই!” তবে তিনি কেন এক্সেপ্টেবল হতে পারলেন না? তাকে স্বেচ্ছায় নির্বাসনে যেতে হল? তিনি যদি জানান, “আই লাভ কার্ভস, আমি না দেখে থাকতে পারিনা!” তবেই তাঁর হাইএডুকেটেড স্ত্রী সৃজিতা (অভিনয়ে রাইমা সেন) তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে , “fuck your writings…fuck your characters!” তখনই তিনি সমাজের চোখে, মিডিয়ার ক্যামেরায় অস্বীকৃত? সিকনেস কোথায়, সিক কে? সিকনেস এক্সেপটেনসে, সিকনেস মানসিকতায়! আর পার্থক্য, পার্থক্য সাহসিকতায়, পার্থক্য প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্যে!

‘ক্ষত’-এর নির্বেদ লাহিড়ীর চরিত্রে অনেকগুলো শেড, অনেকগুলো রঙ! ভালোবাসার রঙ, রোমাঞ্চের রঙ, শরীরের রঙ, কালির রঙ,তবে সবই ‘লাল’…তাঁর জীবনে ঢেউয়ের রঙও লাল! তাঁর চরিত্রের সবকটি শেডের মধ্যে থেকেই তাঁর আচরণ, তাঁর সংলাপ নজরদারির আড়লে থাকা শরীরতুতো,বাসনাগ্রাহ্য সত্যিগুলোকে সরাসরি তুলে ধরে! তাঁর কামনা তাঁর শরীরের প্রতি ভালোবাসা,টান প্রকাশ্যে আসলেই তিনি পার্ভার্ট, আর যে মানুষটা ‘ভদ্রলোকের’ মুখোশ টেনে জেনারেল কম্পার্টমেন্টে ভিড়ের সু্যোগে একজন মেয়েকে ক্রমাগত মলেস্টেশনের মাধ্যমে বিকৃত মানসিকতাগুলোকে উসুল করেন তিনি পার্ভার্ট নন?

অন্তরা(অভিনয়ে পাওলি দাম) কলেজ জীবনে তাঁর মাসতুতো ভাইয়ের প্রেমে পড়েছিল, লিটল ম্যাগাজিনের লেখিকা বিবাহিত জীবনে এসে তাঁদের সময়ের অ্ন্যতম লেখক ও তাঁর বন্ধুর হাসব্যান্ডের প্রেমে আবার পড়ে, তাই সে ব্লাডি বিচ!
আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই একটা বন্যজন্তু লুকিয়ে থাকে, নানাভাবে নানা ঘটনার মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। কোন মানসিকতা বেশি হিংস্র, নির্বেদ এবং অন্তরা যারা একে অপরের শরীরকে ভীষণ ভালোবেসেছিল তাঁরা, নাকি যারা তাদের অ্যাক্সেপ্ট না করে এক কোণায় ঠেলে দিল তাঁরা?

ছবির নানা দৃশ্যাংশের মাঝেমাঝেই পান্ডুলিপির ওপর রক্ত ঝরে পড়ে, ‘ক্ষত’-এর পান্ডুলিপি,আত্মজীবনির পান্ডুলিপি! লেখক বারেবারে পুড়িয়ে দেন তাঁর লেখা তাঁর সৃষ্টি! সারা ছবি জুড়ে শুধু ক্ষত। সিস্টেমের ছড়ির আঘাতের ক্ষত, ভালোবাসার ক্ষত! যাঁর পরিণতি মৃত্যু কিংবা মেন্টাল অ্যাসাইলামের বদ্ধ চার দেওয়াল। ইমোশান ও অনুশোচনাকে বাদ রেখে বাদবাকি ছবিটিতে দৃষ্টিপাত করলে স্বীকার করতেই হয় পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায় নিজের সৃষ্টিকে চলতি বিশ্বাসে আটকে না রেখে “ক্ষত”-এর মত সাহসি পদক্ষেপ নিয়েছেন। এক আত্মজীবনীতেই সমস্ত রহস্য এবং রোমাঞ্চের ধারবাহিকতা। প্রেম, শরীর, থ্রিল… সম্পূর্ণ ছবিটি একটি কাব্যপোন্যাসের মত,ছবির চলন বলনে কাব্যনাটকীয়তা! যেমন-  নির্বেদের স্ত্রী সৃজিতা বিবাহ বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত জানানোর পর ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা লেখার কপির উপর নির্বেদ কুঁকড়ে শুয়ে কাঁদতে থাকে, দৃশ্যটি এক লেখকের ক্ষতের ক্থা বলে।

‘ক্ষত’-তে শব্দের ব্যবহার অসাধারণ লাগল। স্ক্রিনে কোনো ঘটনা দৃশ্যায়িত হওয়ার আগেই শব্দের উপস্থাপনা দর্শকমনকে রোমাঞ্চের পূর্বাভাস দেয়। একটি দৃশ্যে পালাম্যুর জঙ্গলে বৃষ্টি আসার আগে ‘মাঝে মাঝে তোমার পরশখানি দিও’-এর ইন্সট্রুমেন্টাল দৃশ্যজুড়ে রোম্যান্টিসিসমের সঞ্চার করে। সিনেমাটোগ্রাফি ‘ক্ষত’-এর অন্যতম আকর্ষন। ৯০-এর দশকের স্ময়কাল উপস্থাপনার ক্ষেত্রে একটু গড়মিল থেকে গেলেও সিস্টেমের রাখঢাক নজরদারিকে বুড়োআঙুল দেখিয়ে ‘ক্ষত’-এর সাহসিকতা অনেক বেশি গ্রহনযোগ্য বলে মনে হয়েছে। আড়ালে আবডালে কেচ্ছাপ্রিয় বাঙালি মন ‘ক্ষত’-এর সোজাসাপটা বক্তব্যকে পার্ভার্ট বলে অ্যাক্সেপ্ট না করলেও, শরীরতুতো সত্যিগুলো সত্যিই থেকে যাবে, তা প্রকাশ্যে বা অপ্রকাশ্যে!

ছবি সৌজন্যে : গুগল

Thursday, 21 July 2016

"কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ"


কাশ্মীরের রাজনৈতিক পরিবেশে যে একটি বড়ো ধরণের পরিবর্তন আসতে চলেছে তা বেশ কিছু ইঙ্গিতেই বুঝতে পারা যাচ্ছিল তবে এই “মনে করে নেওয়া” গুলোই যে হঠাৎ করেই বাস্তবায়িত হয়ে পড়বে তা গত কয়েক সপ্তাহ আগেও বোঝা যায়নি। বুরহান ওয়ানির মৃত্যু কাশ্মীরের সেইসব পরিবর্তনের ধারণাদের সত্যি করে দিল। বিরোধী নেতা ওমার আবদুল্লার কথা অনুযায়ী, মৃত বুরহান জীবিত বুরহানের থেকে অনেক বেশি ভয়ঙ্কর। বুরহানের মৃতদেহের সাথে যত সংখ্যক মানুষ রাস্তায় নেমেছেন, সেইরূপ জনসমাগম কাশ্মীরের গোটা ইতিহাসে কখনো হয়নি,এমন কি ‘আজাদি আন্দোলনের’ কোনো নেতার মৃতদেহকে ঘিরেও নয়। বুরহানের মৃত্যু গোটা উপত্যকাকে দিশেহারা করে দিয়েছে। নব্বই দশকের প্রথমভাগে কাশ্মীরে যে তুমুল জনবিক্ষোভ তৈরী হয়েছিল সেই ঘুমিয়ে থাকা জন-বিক্ষোভকে বুরহানের মৃত্যু আবার জাগ্রত করে তুলল। লক্ষ করার আর এক বিষয় এই যে, দক্ষিণ কাশ্মীর, বিশেষত শ্রীনগর থেকে জম্মু সংযোগকারী অতি গুরুত্বপূর্ণ হাইওয়ে সংলগ্ন অঞ্চলগুলি আগে এত বিক্ষোভপ্রবণ ছিলনা, বিচ্ছিন্নতাবাদেও বোধহয় এতটা দীক্ষিত ছিলনা। তবে এইবার সংঘর্ষের অন্যতম প্রধান কেন্দ্রই হল দক্ষিন কাশ্মীর।

বুরহানের এক বন্ধুর বক্তব্য অনুযায়ী, ভারতের সেনা অফিসারেরা কাশ্মীরি কিশোরদের পথ অবরোধ করত, জোরপূর্বক তল্লাশি চালাতো এবং শেষে সিগারেট আনার বিনিময়ে তাদের রাস্তা ব্যবহারের অনুমতি দিত।

এরকমই একদিন এক কিশোর ও তাঁর ভাই ভারতীয় সেনাদের আদেশ পালনে সিগারেট কিনতে যায় এবং কেনার পর ফিরে আসে। তবে, অফিসাররা তাদের মারধোর শুরু করে। মার খেতেখেতে একসময় সেই কিশোরের ভাই অজ্ঞান হয়ে পড়ে, তাঁর নতুন বাইকটিও সেনা সদস্যরা ভাঙচুর করে। এই পরিস্থিতিতে কিশোরটি খুব স্বাভাবিকভাবেই তাঁর ভাইয়ের কাছে এগিয়ে যেতে চায় সেইসময় অফিসারেরা তাদেরকে ভয়ভীতি দেখাতে শুরু করে। তখন সেই কিশোরটি ভারতীয় সেনাদের জানায় যা করা হয়েছে তা সে একদিন উসুল করে ছাড়বে। উল্লেখিত রিপোর্ট অনুযায়ী, সেই ঘটনার ছয়মাস পর সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় এবং হিযবুল মুজহিদিনে যোগদান করে। প্রতিশোধস্পৃহায় ঝলসে ওঠা হৃৎপিন্ডটি যার শরীরে ৯জুলাই অবধিও ধুকপুক করেছিল, তিনি বুরহান ওয়ানি। বুরহান মাস এক আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও আপলোড করে সেখানে সে জানায় যে সে ভারতের বিরূদ্ধে কোনো যুদ্ধ চায়না। কিন্তু প্রতিশোধ বিপরীত পক্ষের মস্তিষ্কের প্রতিটি কোশে কোশে যে ভীতি সঞ্চার করে তার ফলস্বরূপ বুরহান তাঁর ২২বছরের জীবনে ভারতীয় সেনার চোখে শত্রু হয়েই থেকেছে। একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, বুরহানের বাবা মু্যফফার আহমেদ ওয়ানি এক মন্তব্যে বলেছিলেন, “এখানে প্রায় প্রত্যেক সেনাবাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হতে হয়। আপনিও তাদের মধ্যে একজন হতে পারেন কিন্তু সবাই তো জঙ্গি হয়ে যায়না। এসব কিছু আত্মসম্মানবোধ থেকে জন্মায়। অনেকে চুপ হয়ে যায় কিন্তু আমার সন্তান তা সহ্য করতে পারেনি। এজন্যই তাকে সেই পথে যেতে বাধ্য করা হয়,যে পথে সে এখনও আছে”। কাশ্মীরের মানুষদের প্রতিদিন যেই লড়াইয়ে বেঁচে থাকতে হয়, সেই লড়াইয়ে বুরহান এক পথপ্রদর্শকের মত। তাঁর মৃত্যু মানুষ মেনে নিতে পারেনা। সংঘর্ষের আহ্বান তৈরি হয় প্রত্যেক মানুষের মনে, সেই অসম সংঘর্ষে প্রাণ যায় আরো ২০জনের। ভারতীয় সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করেন। রামায়ণে হিরোইস্টিক আচরণে রাম যেমন মহান হয়ে ওঠেন সেরকমই মহামানব হয়ে ওঠেন আমাদের ভারতীয় সেনাসদস্যরা। কিষ্কিন্ধা পলিসি ‘বিলো দ্য বেল্ট’ হলেও তা রামায়ণে ‘ওহ! সো ন্যাচারাল!’ হিরোদের ‘বিলো দ্য বেল্ট’-কে সবসময় এড়িয়ে যেতে হয়,শেখা হয় মহাকাব্যে! তবে সেই একই দেশে  ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ লেখা হয়, তাই এক্ষেত্রেও তৈরি হয় পক্ষ এবং বিপক্ষ! আসলে কে হিরো? কোনটা হিট? রামায়ণ না মেঘনাদবধ কাব্য? যাই হোক, কন্ট্রোভার্সিয়াল মন্তব্যে যে কোনো মুহূর্তে গায়ে লেগে যেতেও পারে ‘রাষ্ট্রদোহী’-এর স্ট্যাম্প, আসলে রাষ্ট্র থাকলে থেকে যায় রাষ্ট্রদোহীরাও!

এরপর কাশ্মীরে কারফিউ জারি হয়,এরপর বন্ধ করা হয় প্রেস। কাশ্মীরের মানুষজনকে সম্পূর্ণ পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখার খাতিরে রাষ্ট্রের হাত বন্ধ করে দেয় কাশ্মীরের ইন্টারনেট এবং টেলিফোন মাধ্যম। স্বাধীন এবং গণতান্ত্রিক দেশের অন্যতম প্রতীক হল মুক্ত প্রেস বা স্বাধীন সংবাদপত্র। ১৯(১)(ক)- এর বড় বড় বাক্যির পর যখন গনতান্ত্রিক দেশে বেআইনি ভাবে প্রেসের গলা মুঠো হাতে চেপে ধরে রাষ্ট্র তখন শুধু কাশ্মীর নয় গোটা দেশের গনতন্ত্র উবে যায়। আর ভারতবর্ষে রাষ্ট্রদোহী , ইনটলারেন্স  কিংবা এই জাতীয় শব্দগুলো যতই প্রচলিত হোক না কেন ‘স্বাধীন বাক ও মতামত’ এবং ‘গনতন্ত্র’ এই শব্দগুলোর লেবেল ভারতের গায়ে লাগানো যায়না। বরং বলা যায় রাষ্ট্র অর্থাৎ রাষ্ট্রের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা এই সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকলেও থাকতে পারেন তবে বাদবাকি সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে, যখন ফেসবুকের দেওয়ালে তাঁরা কোনো স্বাধীন মতামত লিখবেন যদি তা এতটুকু ফাঁক ফোকোড়েও রাষ্ট্রবিরোধিতা ছোটো করে বললে ‘ক্ষমতাশালী ব্যক্তি বিরোধিতা’ করে থাকে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তৎক্ষনাৎ সেই পোস্টটি তুলে নেবেন। কোথায় যেন রাষ্ট্রদোহীতা আর স্বাধীন বাক ও মতামত প্রকাশের অদ্ভুত এক বিরোধ থেকেই গেল। নিরপেক্ষতার কার্পণ্য দেশ ত্যাগ না করা অবধি হয়তো এই বিরোধটা থেকেই যাবে। 

একটি দেহ,যার দুটি ভাগীদার। একটি ভাগীদারের প্রতিপত্তি বেশি...তার তরফ থেকে আসা আঘাতও বেশি। তাঁর দেওয়া দাগও বেশি। তবে আদরের দাগ নয় বুলেটের দাগ। চোখের পাতায় চুম্বন নয়...পেলেট গানের দাপট! যার পরিণাম ৯ বছরের খুদের অন্ধত্ব! সেই দেহ দুই ভাগীদারের দাবি সামলাতে সামলাতে যখন ক্লান্ত, ছুটে আসে পাথর,বদলে ফিরে যায় বুলেট। রাষ্ট্র সামলায় নিজেকে ঝক্কি পোহায় সেই দেহ। হুম,রাষ্ট্রের অধিকারে থাকা সেই দেহ! “কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ”... আর লড়তে লড়তে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া সেই মানুষগুলো,যারা মৃত্যুকে বাজি রেখে অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে; বুরহানের মৃত্যুতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠা সেই মানুষগুলো; কাছের জন প্রিয়জনকে হারিয়ে ফেলা সেই মানুষগুলো ; খুব কাছ থেকে সংঘর্ষের সাক্ষী থেকে যাওয়া মানুষগুলো ; পরাধীনতার বেআইনি খাঁচায় বন্দী প্রেস, স্বাধীনতার জন্য প্রতিদিন হাঁপরে মরা প্রাণগুলো জানাচ্ছে, “No India No Pakistan We want FREE KASHMIR”যাছবি সৌজন্যে : গুগল

Wednesday, 20 July 2016

তাঁদের জন্য

আমি সেসব বাঙালিদের মধ্যে পড়িনা যাঁরা নিউজপেপারে ছবি দেখে কিংবা খবরে চোখ বুলিয়ে বিদেশে হামলা হওয়ার জন্য হাহুতাশ করেন। অথবা আমি সেসব ফেসবুক ইউসারও নই যারা "পাশে আছি ফ্রান্স" বোঝানোর জন্য ফেবু ডিপি চেঞ্জ করেন কয়েকদিনের জন্য! এছাড়াও আমার মধ্যে অতটাও ইন্টালেকচুয়ালিটি নেই যে আমি সেসব ইন্টালেকচুয়াল গোষ্ঠীর মত ভিলেনের(সমাজের চোখে,মিডিয়া ক্যামেরায়) দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সমস্ত ঘটনাটি দেখব এবং বিচার করব। বিচার করার মত বুদ্ধি ধৈর্য কোনোটাই আমার নেই!একদম ছাপোষা মধ্যবিত্ত একটা পরিবার থেকে উঠে আসা একটা মন আর কিছু না বুঝুক মৃত্যু বোঝে,জখম বোঝে,খুন সন্ত্রাস বোঝে কিংবা বোঝার চেষ্টা করে! এই সংবাদ পড়ার পর আর কার কি হয় বা হতে পারে আমি জানিনা তবে একজন লেট রাইসারকে সকাল ৬টা থেকে জাগিয়ে রাখতে পারে। "রয়টার্স" থেকে পাঠানো ছবিটি সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় দেখে বুকের বাঁদিকটা চিনচিন করে। সম্পূর্ন খবরটা পড়ার পর শুধু এটাই মাথায় আসে যেসব মানুষরা কাল সন্ধেতে "বাস্তিল ডে" উদযাপনের জন্য শহরের সি-বিচে ভিড় জমিয়েছিলেন তাঁরা জানতেনও না রাত সাড়ে দশটায় কি হতে চলেছে! ভাবলে অবাক লাগে, যে সময়  আমরা বার্থডে পার্টি সেলিব্রেট করছিলাম কিংবা কোথাও চলছিল রক কনসার্ট কিংবা শহরে যখন দুর্গাপুজোর খুঁটিপুজো হচ্ছে তখন অন্য আর একটি শহরে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ বাঁচানোর জন্য পালাচ্ছেন। সেই ৮৪জন মানুষ কাতড়াচ্ছেন মৃত্যু যন্ত্রনায় তার মধ্যে ১০জন শিশু যারা কোনোভাবেই কোনো অন্যায়ের ভাগিদার নয়! ২০২জন মানুষ আঘাতে রাস্তায় পড়ে ছটফট করছেন! সাধারণ মানুষের মত আমি শুধু বুঝি সবচেয়ে বড় সত্য প্রাণ, এক্সট্রিম পয়েন্ট হল মৃত্যু! যার ওপাশে কিচ্ছু হয়না! শুধু নিস-এ না, এর আগেও ২০১৫-এ শার্লি এবদো-র অফিসে ঢুকে ১১জনকে হত্যা করা হয়,তারপর প্যারিস হানা...যে পক্ষেরই হোক,যে দাবিতেই হোক মৃত্যু সবসময় কষ্টের!
গতকাল যা ঘটল, সাদা রং শান্তির প্রতীক এই কথা ভুলতে বসছি,এবার থেকে "সাদা রং" দেখলেই প্রথম সেই ৮৪ জনের রক্তের কথা মনে পড়বে...


পেজ থ্রি সাংবাদিকতা - এক বিতর্কিত গৃহীত বিষয়

সাংবাদিকতার নতুনধারায় যেভাবে মানুষের শরীর , যৌনতা ও ব্যক্তিগত জীবনকে টেনে আনা হচ্ছে ও এই ধরণের ছবি ও লেখার প্রকাশ করার প্রবণতা যেভাবে বাড়ছে তাতে সাধারণ মানুষ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের উপর বিশ্বাস হারাচ্ছেন, প্রশ্ন উঠছে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে। যদিও সংবাদপত্রগুলির পেজ থ্রি সাংবাদিকতার দিকে ঝোঁকার পেছনে যে খুব স্বাধীনতা আছে তা নয়, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা যে ডুয়াল ইকোনমিতে আটকা পড়ে। বিজ্ঞাপন পাওয়ার জন্য সংবাদপত্রগুলি যে তাদের প্রচার সংখ্যা বাড়ানোর জন্য পেজ থ্রি-কে পণ্য হিসেবে ব্যবহার করছে চাপ থাকছে ক্রসমিডিয়া মালিকানার। স্বাধীনতার লাগামটা ধরা থাকছে বড়ো বড়ো বিজ্ঞাপনদাতা এবং ব্যবসাদারদের হাতে। তারা ঠিক করে দিচ্ছে সংবাদপত্র কি প্রকাশ করবে কি করবে না! তাই যে সংবাদপত্র স্বাধীনই নয় তার স্বাধীনতার ব্যবহার অপব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করা যায়না! পেজ থ্রি সাংবাদিকতা তারই এক নিদর্শন মাত্র। কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে সেসব হিসেব জটিল। তারা দাবি করছে সংবাদপত্রকে যতটা স্বাধীনতা দেওয়া হচ্ছে সে ততই রাজনৈতিক বিশ্লেষন থেকে সরে যাচ্ছে ঝুঁকছে পেজ থ্রি সাংবাদিকতার দিকে।
১৯(১)(ক)-এর বাক ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার ভিত্তিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলা যায়। বাক স্বাধীনতার পাশাপাশি যখন মতামত প্রকাশের স্বাধীনতার কথাও আসে তখনই অন্য এক ব্যক্তির উপস্থিতি ধরে নেওয়া হয় যাকে নিজের মত হস্তান্তর করা হয়। অর্থাৎ ১৯(১)(ক)-এ জ্ঞাপনের স্বাধীনতার কথা বলা হয়। সেক্ষত্রে দেখতে গেলে, কোনো মানুষ বা প্রতিষ্ঠান তাঁর ইচ্ছা ও চাহিদা অনুযায়ী মুদ্রণ প্রযুক্তির সাহায্যে কোনো কিছু ছাপার বা প্রকাশের অধিকার রাখেন। (মানহানির ব্যতিক্রম মেনে – সরল বিশ্বাসে জনস্বার্থে প্রকাশ করেন। অশ্লীলতা আইন অনুযায়ী যা অমার্জিত(Vulgar)তা প্রকাশ করা আইনত অপচরাধ নয়, ভালগারিটি আর অবসিনিটির মাঝে একটি বিভাজন রেখা আছে)।
এর পাশাপাশি ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা তত্ত্ব’ -কেও সংবাদপত্রগুলি এড়িয়ে গেলে চলবেনা। সামাজিক দায়বদ্ধতাতত্ত্বের মৌলিক বিষয় হল স্বাধীনতা ও গ্রহনযোগ্যতার মধ্যে সম্পর্ক। ‘সামাজিক দায়বদ্ধতা তত্ত্ব’ বিশ্বাস করে যে গণমাধ্যম সমাজে একটা ভারসাম্য রক্ষা করে চলবে। সমাজের দর্পণ হয়ে উঠবে গণমাধ্যম।
সংবাদপত্রগুলিকে সেদিকটিও মাথায় রাখতে হবে যে তাদের গনতান্ত্রিক সমাজের প্রতি একটি দায়িত্ব আছে,যেখানে গতান্ত্রিকতার প্রতীক একটি স্বাধীন সংবাদপত্র। (প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন এখানে পরাধীনতা বলতে প্রচার বাড়ানোর কম্পিটিশনের জন্য যে পরাধীনতা ,ক্রস মিডিয়া মালিকানার হাতে বন্দী পরাধীনতার কথা বলা হচ্ছে।) তাই “পাঠকরা কোনটা খাবে?’’ জাতীয় প্রকাশনা এড়িয়ে চলা উচিৎ।
পেজ থ্রি সাংবাদিকতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে মত পেশন করে সে প্রসঙ্গে আলোচনা করার আগে একটা ঘটনার কথা উল্লেখ করার কথা মনে হল- দিল্লীর একজন আইন জীবি শ্রী অজয় গোস্বামী একটি জনস্বার্থ সংক্রান্ত মাম লায় সুপ্রিম কোর্টের কাছে আবেদন জানান যে দেশের কিছু কিছু নামি ও বড়ো সংবাদ প ত্র জন সাধার ণের বিকৃত কাম না পূর নের জন্য এই ধ রণের সাংব দিকতা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০০৬ সালে ১২ই ডিসেম্বর এই মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট আবেদন কারি আইন জীবিকে ‘অতি সংবেদণশীল’ বলে উল্লেখ করেন। কোর্ট এই মর্মে রায় দেয় যে, যদি কোনো পাঠক সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনো কিছুকে আপত্তিজনক বলে মনে করেন, তাহলে তিনি সেই কাগজ পড়া বন্ধ করে দিতে পারেন।
আবেদন কারীর যুক্তি খন্ডন করে সুপ্রিম কোর্ট জানায় যে এই সংবাদপত্রগুলি তাদের পাঠকদের কাছে একটা সম্পূর্ণ পাঠযোগ্য বিষয় তুলে ধরতে চায়; যেজন্য তাঁর সাম্প্রতক ঘটনা, ক্রীড়া, রাজনীতি এমনকি বিনোদোন এইসব বিষয় সম্বন্ধে পাঠকদের সারা বিশ্বের সর্বশেষ তথ্যাবলী দিতে আগ্রহী। কোর্ট একথাও জানায় যে, শোভনীয়তার মাপ কাঠি মেনে বিনদন মূলক যে বিষয় প্রকাশ করা হয়, তা থেকে জন সাধারণকে বঞ্চিত করা উচিৎ নয়। অবশ্যই একথা মনে রাখতে হবে যে, এই বিষইয়গুলি কিন্তু ছোটো ছেলেমেয়েদের জন্য প্রকাশিত হচ্ছেনা। এই ধরণের লেখা  বা ছবির প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়ার অর্থ হল স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যা একেবারে বাঞ্ছনীয় নয়; কারন আমাদের গনতান্ত্রিক পরিকাঠামোর একটা অন্যতম দিক হল স্বাধীন সংবাদপত্র।
তবে একথা ঠিক যে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত সংবাদপত্রগুলিতে প্রচলিত পেজ থ্রি সাংবাদিকতার মান এখনো অতটাও নিচে নেমে যায়নি যেখানে বিকৃত কামনার বিষয় বস্তু প্রকাশিত হয়। সেলিব্রেটিদের ব্যক্তিগত জীবন ঘেঁষা ও টুকটাক সেনসেশন গসিপ নিয়ে রমরমিয়ে এগিয়ে চলেছে বাংলা সংবাদপত্রের পেজ থ্রি সাংবিকতা,জানিনা ভবিষ্যতে এর মোড় কোন দিকে ঘুরবে তবে যে মোড়েই এর গতি বাড়ুক কিংবা শোভনীয়তার সিগন্যাল ব্রেক করুক না কেন যৌনতা ও অপ রাধের অনুপান দিয়ে কাগজের মালিকরা যেভাবে পড়ে যাওয়া প্রচার সংখ্যা অর্থাৎ বিক্রিকে চাঙ্গা করে তোলার কথা ভাবছেন বা ভাববেন, সংবাদপত্র সংবেদনশীলতাকে তুলে ধরুক বা পর্ণ গ্রাফিক আলোচনা করুক ; প্রশ্ন হল এতে লাভ কার হচ্ছে উত্তর একটাই ‘মালিকের’!
 

Keep clam and play the role of media

This is my first blog in blogspot. I am a student of mass communication. I would like to continue my writing. Thank you. :)