অবশেষে রিয়া গ্রেপ্তার হলেন । কিন্তু কেন গ্রেপ্তার হলেন ? সুশান্তের খুনের জন্য ? টাকা তছরূপ ? তাও না । বয়ফ্রেন্ডের জন্য
গাঁজা কিনে রিয়া গ্রেপ্তার হলেন । গাঁজাপাচারকারীদের ধরতে সাধারণত স্থানীয় পুলিশই যথেষ্ট । কিন্তু এইক্ষেত্রে সিবিআই ডেকে, হেনস্থা করে এক বড় কাজ উদ্ধার হল । রিয়া
গ্রেপ্তার হলেন ! 59গ্রাম গাঁজা উদ্ধারের জন্য শেষে এনসিবির তলব হল ? কিন্তু যাই হোক, রিয়া গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব । কেন ? তার অনেকগুলোই কারণ আছে । বিহার নির্বাচন, দেশের
অর্থনৈতিক অবস্থান, করোনা সংক্রমণ, পিতৃতান্ত্রিক শোষণ...এই প্রত্যেকটা ক্ষেত্রের
জন্য আজ রিয়া গুরুত্বপূর্ণ !
যেইদিন সুশান্তের মৃতদেহ উদ্ধার হয়, সেইদিন অসম্ভব খারাপ লেগেছিল । তার মাত্র
কয়েক সপ্তাহ আগেই আমার অন্যতম প্রিয় অভিনেতার মৃত্যু হয়েছে । তারপর সুশান্তের মত
একটি প্রাণোচ্ছল ছেলে এইভাবে আত্মহত্যা করবে কেউ ভাবিনি । আসলে আজ পর্যন্ত যাঁরাই আত্মহত্যা করেছেন, আমরা
কেউ ভাবিনি তাঁরা আত্মহত্যা করবেন । মানুষ কেন আত্মহত্যা করেন, কী থেকে মুক্তি
পেতে... আমরা জানি না । তবে মনস্তত্ত্বের এক ব্যাখ্যা বলে, তাঁরা মৃত্যু চান না ।
তাঁরা শুধুই যন্ত্রণার অবসান চান । সুশান্তের ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই কি না জানি না
। সুশান্ত যে মানসিক অবসাদের রোগী ছিলেন, তিনি চিকিৎসা করাচ্ছিলেন । সেই বিষয়ে
একাধিক তথ্য প্রকাশ্য এসেছে । সুশান্তের চিকিৎসক, মনোবিদও জানিয়েছেন । সুশান্ত শেষের
দিকে ওষুধ খেতেও চাইতেন না । জানি না, রিয়াকে কতটা পাশে পেয়েছেন তিনি, বা রিয়া কী
পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে । এটা তাঁদের ব্যক্তিগত পরিসর । তবে রিয়া ছেড়ে চলে
যাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই সুশান্তের মৃত্যু হয় । কেন, কী ভেবে সুশান্ত চূড়ান্ত
পদক্ষেপ করলেন আমরা জানি না । কিন্তু আমাদের দেশ কেন মানতে পারেনি সুশান্ত অসুস্থ
ছিলেন ? যদি সুশান্তের অন্য কোনও
অসুস্থতা থাকত, অবশ্যই সবাই মেনে নিতেন । কিন্তু ভারত মানসিক অসুস্থতা মেনে নিতে
পারে না । মানসিক অবসাদ একজন মানুষকে কীভাবে ক্ষয় করতে পারে, তা জানে না । কিশোর
বয়স থেকে শুরু করে, চাকরিহীনতা, সম্পর্কের টানাপোড়েন, আর্থিক অভাব...সবকিছু নীরবেই
মেনে নিতে শিখি আমরা । বেশিরভাগ অভিভাবকই মানতে চান না, তাঁর সন্তান মানসিক অবসাদে
ভুগছে । আর এই অসুখের বিজ্ঞানসম্মত কারণ আছে । সুশান্তের পরিবারও হয়তো সেই
মধ্যবিত্ত মানসিকতার বাইরে না । সুশান্তের মৃত্যুর পর তাঁর টুইটার প্রোফাইল দেখেছি
। ইন্স্ট্যা প্রোফাইল দেখেছি । ওঁ মায়ের কথা লিখেছেন । হয়ত যন্ত্রণা সামান্য হলেও
অনুভব করেছি । আবার এও দেখেছি, সুশান্তের প্রিয় ভ্যানগগ । আর ভ্যানগগের মৃত্যু আজও
রহস্য । তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন, না কি তাঁকে খুন করা হয়েছিল কেউ জানে না । গতবছর
সেই আততায়ী বন্দুকের নিলাম হয় । আর এইভাবেই পৃথিবী এক একটি শিল্পকে নিলামে চড়ায় ।
ভ্যানগগ তাঁর ভাইকে চিঠিতে লিখেছিলেন, “তারাদের দৃশ্য তাঁকে সবসময় টানে । সেই তারাদের
কাছে যাওয়ার জন্য মৃত্যুকে নির্বাচন করতে পারি আমরা ।” ভ্যানগগ জীবনের কিছুটা সময়
মেনটাল অ্যাসাইলামে কাটিয়েছেন । তার জানলা দিয়ে দেখা দৃশ্য এঁকেছেন । ভ্যানগগ
নিজের কান কেটে ফেলেছিলেন, তারও একাধিক ব্যাখ্যা একাধিক জায়গায় পড়েছি । তবে
সবথেকে বেশিবার যে কারণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা হল... ভ্যানগগের বন্ধু তাঁকে
ছেড়ে যাচ্ছিলেন, তাঁকে আটকানোর জন্য তাঁকে বন্ধুত্বহীনতার যন্ত্রণা বোঝানোর জন্য
কান কেটে ফেলেন ভ্যানগগ । সেই ভ্যানগগ, যিনি লিখেছিলেন, “দুঃখযাপন(স্যাডনেস উইল
লাস্ট ফরএভার)চিরন্তন।” কেন লিখেছিলেন, ভ্যানগগ কী ভেবেছিলেন কেউ জানি না । আজ
এতগুলো কথা লিখলাম, কারণ ভিনসেন্ট আমার খুব কাছের মানুষ, অথচ তাঁকে আমি
ব্যক্তিগতভাবে চিনি না । তাঁর ছবি দেখে বারবার এইটাই মনে হয়েছে, তাড়াহুড়ো
করছিলেন তিনি । তুলির টান বুঝিয়ে দিয়েছিল সময় কম । এই পৃথিবীতে সময় কম । সুশান্তেরও
হয়ত কাছের মানুষ ছিলেন ভিনসেন্ট । আমাদের ব্যক্তিত্ব অনুযায়ী, আমরা সেই একইরকম
ব্যক্তিত্বের দিকে আকৃষ্ট হই । সুশান্তের ক্ষেত্রেও বিষয়টি হয়ত সেরকম । তিনিও
ভেবেছিলেন, “দুঃখযাপন চিরন্তন ।” সুশান্তের মৃত্যুতে মুম্বই
ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি আরও এক নক্ষত্রপতনের সাক্ষী থাকতে পারত । আমরাও হতবাক ছিলাম । যবনিকা
পতনের পর অভিনেতার মঞ্চে ফেরার অপেক্ষা করছিলাম । ভেবেছিলাম শিল্প বেঁচে থাকবে ।
কিন্তু আবার যবনিকা ওঠে, কিন্তু অভিনেতা মঞ্চে ফেরেন না । বরং ফিরে আসে কদর্য রাজনৈতিক
কৌশল । একটি রাজনৈতিক দল কতটা নিচ হলে তারা অভিনেতার মৃত্যুকে নির্বাচনের হাতিয়ার
করতে পারে ।
অক্টোবরে বিহারের বিধানসভা নির্বাচন । তার আগে সুশান্তের মৃত্যুকেই কাজে লাগায়
বিজেপি । যখন সবেই রিয়া প্রেমিকের মৃত্যুর কষ্ট মানিয়ে নিচ্ছেন, সেই সময়ে
সুশান্তের পরিবারের তরফে অভিযোগ দায়ের হয় রিয়ার বিরুদ্ধে । তিনি সুশান্তের মৃত্যুর
জন্য দায়ি । সুশান্তের টাকা নিয়েছেন, সুশান্তকে তাঁর পরিবার থেকে আলাদা করেছেন । এরকম
একাধিক অভিযোগ আসতে থাকে তাঁর বিরুদ্ধে । এই একইসময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়
রিপাবলিক টিভি । রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগেই তাঁকে এমনভাবে
পোর্ট্রে করা হয়, যেন রিয়া সত্যিই দোষী । সেই ‘বাঙালি ডাইনি’, যে প্রেমিকের টাকা
আত্মস্যাৎ করে তাঁকে খুন করে ।
উত্তর ভারতীয় পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থা, এই ধারনায় যথেষ্ট বিশ্বাস করে । অন্তত
তাদের সংবাদমাধ্যমের এই প্রচার মেনে নিতে কোনও সমস্যা হয় না । বরং, তারা এই
কথাগুলোই শুনতে ভালবাসেন । তাঁরা সেই সব মেয়েদের পছন্দই করেন না, যাঁরা অন্তত
ঘেরাটোপ থেকে বেরিয়ে নিজের জীবন খুঁজে নিতে চেয়েছেন । পরিশ্রম করছেন । তাই রিয়ার
অসম্মান তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করতে তাদের কোনও অসুবিধে হয়নি । উলটে ভেবেছেন, বেশ
হয়েছে । এমনটাই হওয়া উচিত ছিল । ডাইনি একটা ! কিন্তু কেন ডাইনি ? কারণ পিতৃতন্ত্র কখনও মনেই
করেনি, একজন মেয়ে অসাধারণ কিছু করতে পারে । তাই সাধারণের বাইরে গিয়ে কিছু করে দেখালেই
ভেবে নেওয়া হয় সে জাদু জানে । অর্থাৎ, তার অসাধারণ কিছু করার ক্ষমতা নেই । তাকে
জাদুর সাহায্য নিতে হবে । বা সে হয়তো ডাইনি । ডাইনিবাদের সঙ্গে নিকৃষ্ট জেন্ডার
পলিটিক্স অতপ্রতভাবে জড়িয়ে আছে । উত্তর ভারতীয় জেন্ডার পলিটিক্সকে কাজে লাগিয়ে,
পিতৃতান্ত্রিক ভোগ বিলাসিতা, শোষণকে আরও উসকে দিয়ে দূরে দাঁড়িয়ে বিষয়টি তাড়িয়ে
তাড়িয়ে উপভোগ করে বিজেপি । আর বলিকাঠে তোলা হয় রিয়াকে । পাশাপাশি সব বাঙালি
মেয়েদেরও একইভাবে সোশাল মিডিয়ায় ট্রোলিং, স্লাট শেমিং শুরু হয় । একটি
পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার থেকে আর কীই বা আশা করা যায় ?
শেষ পর্যন্ত রিয়ার বিরুদ্ধে একটিও অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হয় না । তিনি
প্রেমিকের টাকা আত্মসাৎ করেননি, প্রেমিককে খুন করেননি । কিন্তু বিহার নির্বাচন
সামনেই, তাই রিয়াকে গ্রেপ্তার হতেই হবে । নাহলে এই তিনমাসের সম্পূর্ণ প্রোপাগান্ডা
মাঠে মারা যাবে বিজেপির । যেখানে অন্যায় হয়ইনি, সেইক্ষেত্রে কী বিচার হবে ? বিহার নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যেই পোস্টার ছাপানো
হয়েছে, যেখানে সুশান্তের মৃত্যু ইশু বানানো হচ্ছে । ‘জাস্টিস ফর সুশান্ত’ ! একমাত্র বিজেপির পক্ষেই
হয়ত কোনও অভিনেতার মৃত্যুকে হাতিয়ার বানিয়ে এই কদর্য খেলা খেলা সম্ভব !
রিয়ার সঙ্গে আজ যা হচ্ছে, তাকে অনেকেই সতী প্রথার সঙ্গে তুলনা করেছেন । আসলে
বিষয়টা হচ্ছে ‘শাস্তি’ । ঘেরাটোপ থেকে বের হওয়া,
সংগ্রামরত নারীদের জন্য পিতৃতন্ত্র সবসময়ই তুরুপের তাস সাজিয়ে রাখে । প্রয়োজনে
ব্যবহার করে । সেই সময় তার নখ, দাঁত, হিংস্র রূপটা বেরিয়ে আসে । রিয়ার ক্ষেত্রেও
তার অন্যথা হয়নি । সংবাদমাধ্যমের রিয়ার উপর হামলে পড়া এবং সেইসব ছবিতে কদর্য
কমেন্ট বুঝিয়ে দিয়েছে পিতৃতন্ত্রের আসল সুপ্ত বাসনাটি ঠিক কী ! একজন মেয়েকে অকারণ
যন্ত্রণা দেওয়া ও তাকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা । পৈশাচিক আনন্দ । ঠিক যেমন সতী
প্রথাতেও হয়ে থাকত । যাঁরা বেঁচে যেতেন, তাঁদের থেকে যৌনতার অধিকার কেড়ে প্রয়োজন মতো
ভোগ করত এই ব্রাহ্মণ সমাজই । তারপর শুধুই সময় বদলেছে, আজ কয়েকটি মুষ্টিমেয় সংবাদমাধ্যম
ছাড়া বেশিরভাগ মাধ্যমই তাঁবেদারি করে যাচ্ছে । টিআরপি-র জন্য একের পর এক অন্যায়
করে যাচ্ছে । ভাবতে লজ্জা লাগে, হনার্স পড়ার সময় এই বিষয়ে কী পড়েছিলাম ! আর আসল
দুনিয়াটা কী ! দেশে এক সালিশি সভা বসেছে । বিচার করছে পিতৃতন্ত্র, জ্বালানি দিচ্ছে
মিডিয়া । কার বিচার হচ্ছে ? এক নির্দোষ মেয়ের । যার হেনস্থা প্রত্যেকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে
উপভোগ করছে শুধুমাত্র নিজেদের পৈশাচিক তৃপ্তির জন্য !
তবে সবাই এক পাক্ষিক হয়ে যায়নি । অনেক বলিউড তারকা থেকে শুরু করে, পরিচালক,
লেখক, সাংবাদিক, অধ্যাপক, গবেষক, সমাজকর্মী, নারীবাদীরা রিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছেন ।
আমাদের মত অনেক সাধারণ মানুষ রিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে বলেছেন, যা হচ্ছে তা অন্যায় ।
সোশাল মিডিয়ায় জাস্টিস ফর রিয়া হ্যাশট্যাগও ট্রেন্ড হয়েছে ।
আর বিপরীতে বিজেপির মুখপাত্র হয়ে লড়ে যাচ্ছে কঙ্গনা রনওয়াত । আপাতত তাঁর
জনপ্রিয়তার প্রয়োজন । যে দেশে সাংবাদিকদের কোনও নিরাপত্তা নেই, সেদেশে অভিনেত্রীকে
ওয়াই পর্যায়ের নিরাপত্তা দেয় কেন্দ্র । কারণ তিনি বিজেপির পক্ষে কথা বলেন,
সাম্প্রদায়িক কথা বলেন । মুম্বইকে পাক অধিকৃত কাশ্মীর বলতে তাঁর বিন্দুমাত্র বাধে
না । যে অভিনেত্রী স্বপ্নের ওই শহরটাকে ভালই বাসতে পারেননি, তাঁর থেকে এই কথাই
কাম্য । গতকাল কঙ্গনার বেআইনি কন্সট্রাকশন ভাঙার জন্য অনেক বিজেপি সমর্থক খুব আঘাত
পেয়েছে । যদিও জামিয়া, জেএনএউ-র মতো ভারতের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দক্ষিণপন্থী
গুন্ডারা এসে ভাঙচুর করেছে । তখন যদিও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রী সবাই চুপ
ছিলেন । তা থাকাই স্বাভাবিক, ফ্যাসিবাদী সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কবে ভাল চেয়েছিল
?
এই লেখা শেষ করার আগে তাঁদের উদ্দেশে দুইটি কথা লিখব । যাঁরা কঙ্গনার পক্ষে
কথা বলছেন, এবং রিয়ার পক্ষে কথা বললে তাকে ‘ফেক ফেমিনিজ়ম’ বলছেন । কারণ তাঁরা মনে
করছেন, রিয়ার পক্ষে কথা বললে কঙ্গনার পক্ষেও কথা বলা উচিত কারণ আমরা নারীবাদী । আমি
জানি না, ফেক ফেমিনিজ়ম বলে কোনও বিষয়ের অস্তিত্ব আছে কি না, তবে সিউডো ফেমিনিজ়ম
বা ছদ্ম নারীবাদ বলে একটি বিষয় রয়েছে । তাঁরা কি সেই বিষয়ের কথাই বলছেন ? এই কথা আমি আগেও অনেকবার লিখেছি , আবার লিখছি । পিতৃতন্ত্র
অর্থাৎ পুরুষকেন্দ্রিক না । পিতৃতন্ত্র একটি সমাজব্যবস্থা, যার শিকড় অনেক গভীর
পর্যন্ত বিস্তৃত । এতটাই মজ্জাগত যে আমরা কখনও অজান্তেই পিতৃতান্ত্রিক হয়ে উঠি ।
সেই জাল থেকেই বেরিয়ে আসাই মুক্তি । পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা থেকে মুক্তি । পুরুষের
থেকে মুক্তি না ! এই মুক্তির জন্য এক চিরন্তন আন্দোলনের প্রয়োজন, যা লড়ছেন অনেকেই
। আমরাও হয়তো কখনও কখনও । এই পিতৃতন্ত্র কী, তা নিয়ে অনেক বই রয়েছে । পিতৃতন্ত্রের
উথ্থান নিয়ে মার্ক্সবাদী ব্যাখাও দিয়েছেন ফ্রেডরিক এঙ্গেলস । কিন্তু বিষয়টি অত্যন্ত
সহজ করে কমলা ভাসিন তাঁর ‘হোয়াট ইজ় পেটিয়ার্কি’ বইতে বুঝিয়েছেন । সময়, পরিসরের সঙ্গে সঙ্গে
পিতৃতন্ত্রের শোষণ বদলে যায়, সেই একইসঙ্গে তার প্রতিরোধে তার বিরোধিতায় সেইখানে
সেইভাবেই গঠিত হয় নারীবাদী আন্দোলন । সমাজের এক একটি স্তরে সেই আন্দোলনের অর্থ ও
উদ্দেশ্য আলাদা । এখন বিষয় কেন রিয়ার পক্ষে কথা বলছি, কেন কঙ্গনার পক্ষে কথা বলছি
না । তবে আমি ছদ্ম নারীবাদ পোষণ করছি ? না ! নারীর হয়ে কথা বলার
জন্য নারীবাদ না, পিতৃতান্ত্রিক ব্যবস্থার বিরুদ্ধতার জন্য নারীবাদ । তা নারীর
বিরুদ্ধেও হতে পারে, পুরুষের বিরুদ্ধেও । সম অধিকারের বিরুদ্ধে ও পুরুষতন্ত্রের
পক্ষে যে কথা বলবে, নারীবাদ তার বিরুদ্ধেই গর্জে উঠবে । কঙ্গনা পিতৃতন্ত্রের পক্ষে
কথা বলেছিলেন, তাই নারীবাদ তাঁর বিরুদ্ধতা অবশ্যই করবে । আসলে কোনটা ছদ্ম নারীবাদ
বা তরল নারীবাদ তা চিহ্নিত করার জন্যেও ন্যূনতম জ্ঞানের প্রয়োজন হয় । উইকিপিডিয়া
না পড়ে দুইটি বই পড়ার প্রয়োজন হয় । তা না পড়ে যে কোনও কিছুকে তকমা দিয়ে দেওয়া
যায় না । কোনও বাদ বা ইজ়ম অত সহজ বিষয় নয়, তা বোঝার জন্য অধ্যাবসায়ের প্রয়োজন ।
কিন্তু তা দিয়ে তাঁদের কাজ নেই । আপাতত তাঁরা রিয়ার সালিশি সভায় মজুক । তাড়িয়ে
তাড়িয়ে শাস্তি উপভোগ করুক, কে জানে কাল কী অপেক্ষা করছে...