HAPPY READING...


Saturday, 12 August 2017

'আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ' : একটি পোয়েটিক মৃত্যুকাহন

যখন কোনো মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় তখন হয়তো আরো একটা মৃত্যুকে আন্দাজ করা যায় আমার মনে হয় প্রত্যেক মৃত্যুর মধ্যেই একটা রিদম আড়াল করা থাকে, সেই রিদমটুকুই আমাদের ছুঁয়ে যায় আমরাছেড়ে যাওয়া’-টুকু অনুভব করতে পারি, দুঃখ পাই! অনেক সময় এমন হয় যার জন্ম নিয়ে লিখতে বসা আর্টিকেলটা এখনো শেষ করে হয়ে ওঠা ওঠেনি, তার মৃত্যূ নিয়ে লিখতে বসতে হয় এটা একটা রূপকের মত, অর্থাৎ যাঁর জীবনটাই সবে শুরু হল তার মৃত্যুট যদি অনেক তাড়াতাড়ি চলে আসে তার রিদম বাকি মৃত্যূদের থেকে আলাদা হয়, সেই অনুভূতির ছুঁয়ে যাওয়াটুকুরই আভাস দেয় ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’, যেখানে মৃত্যু একটা নিষ্ঠুর কবিতা, যে কবিতা যৌবনের পরোয়া করেনাযার আছে শুধু মনখারাপ



সেদিন অনিন্দ্য দা ক্লাসে পড়ানোর সময় একটি ছবির উদাহরণ দিতে গিয়ে একটা কথা বলেছিল, কাল ছবিটির প্রথম দৃশ্যে সেই কথাটিই খুব মনে পড়ছিল। প্রাণ যখন শরীর থেকে একবার বেরিয়ে যায় তখন তা তার শরীরটিকে দেখতে পায়, পাশে এসে বসতেও পারে কিন্তু ফিরে আসতে পারেনা। সবই দেখতে পায়, কাছের লোকের গাড়িতে করে ফিরতে পারে কিন্তু তাদের আর ডাকতে পারে না।

‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’ ছবিটির প্রথম দৃশ্যে দেখা যায় একটি গাড়ি ‘কে.সি.এম হাসপতাল ও মর্গ’-এর সামনে থেকে কলকতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। Brian ( অভিনয়ে -Jim Sarbh) নান্দুকে (অভিনয়ে- Gulshan Devaiah) গাড়ির পেছনের ডিকিতে কিছু একটা রাখার সময় বলে যে এটার হাঁটুর দুটো মুড়ে ফেটাল পসিশনে রাখি? এবং তাদের কথোপকথন থেকে বোঝা যায় তারা মর্গ থেকে একটি মৃতদেহ নিয়ে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছে। গাড়ি চলতে শুরু করে ক্যামেরা প্যানিং করে জুম ইন হয় ‘মর্গ’-এর সাইন বোর্ডে, গাড়িটি অফস্ক্রিন হয়ে যায়।
 বিষয়টা কাকতালীয় বা ইচ্ছাকৃত কিনা জানিনা তবে ভাববার বিষয় এই যে, যখন একজন শিশু মাতৃগর্ভে থাকে তখন তার শরীরটা সেই একই রকমভাবে থাকে, হাঁটু দুটো সামনে মুড়ে...ফেটাল পসিশনে। মাতৃগর্ভে সে একটি এরকম বদ্ধ জায়গাতেই থাকে যেখানে চারপাশটা অন্ধকার, গাড়ির ডিকিতেও ব্যপারটা অনেকটা একইরকম...সেই অন্ধকার, বদ্ধ। পার্থক্য শুধু এটাই মাতৃ গর্ভে সেই শরীরটিতে প্রাণ থাকে, সে সব অনুভব করতে পারে আর গাড়ির ডিকিতে ফেটাল পসিশনে পড়ে থাকা মর্গ ফেরত শরীরটিতে পোস্ট মর্টেমের কাঁটা ছেঁড়া আছে কোনো প্রাণ নেই, সে কিছু অনুভব করতে পারেনা।  প্রাণটি শরীর থেকে একবার বেরিয়ে যাওয়ার পর একই গাড়িতে হয়তো বসে যেতে পারে, কিন্তু ছুঁতে পারেনা! এই কথাটা যতবারই কাল রাতে খেয়াল হয়েছে ঘুমাতে পারিনি উঠে বসেছি, কঙ্কনা সেন পরিচালিত ‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’ মৃত্যুকে এরকম ভাবে ভাবতে শেখায়।

এরপর পালাম্যুর জঙ্গলের রাস্তা ধরে গাড়িটি কলকাতার দিকে ফিরতে শুরু করে, স্ক্রিন ফেড হয়ে যায়...টাইটেল দেখা যায়। এরপর আবার যখন আমরা ছবিতে ফিরে আসি, ফিরে আসি সেই একই রাস্তায়...তবে ছবির সূত্র ধরে আমরা এখন সাতদিন আগের সময়ে। ১৯৭৮ সালের শেষ সপ্তাহ, ক্রিসমাস উইক সেলিব্রেট করতে একটি পরিবার আসে ম্যাক্লাক্সিগঞ্জে। জায়গাটির নামেই একটি কেমন রূপকথার ধাঁচ আছে, যা এই বাস্তবটা থেকে অনেক দূরে, এক জঙ্গলের ভেতর দিয়ে এক অন্যরকম জায়গার উদ্দেশ্যে।

যেখানে সত্যিই বাস্তব থেকে দূরে থাকা যায়, যেখানে চিন্তা ছুঁতে পারেনা কাউকে। সেখানে শুধু এক পরিবারের মেলবন্ধন আছে, আছে সন্ধেবেলার নির্ভেজাল আড্ডা। যে আড্ডায় ছোট বড়ো নির্বিশেষে সব নিয়মের উর্ধে গিয়ে অংশগ্রহণ করে। ২০১৭ সালেও কোনো এক বাঙালি পরিবারের ছুটি কাটানো বা গেট টুগেদার পার্টি ভাবলে যা চিন্তা করা যায়না, সেই না চিন্তা করতে পারা জিনিষগুলোই ১৯৭৮ সালের প্রেক্ষাপটে এনে স্ক্রিনে দেখিয়েছেন পরিচালক। বাঙালি গেট টুগেদারে এক বিদেশি ছাপ রেখেছেন। যা ১৯৭৮ সালের প্রেক্ষাপটে ভাবাটা বেশ কিছুটা অবাস্তব হলেও পরিচালক সেসবের পরোয়া না করেই বাঙালি পরিবারের গেট টুগেদার সম্বন্ধিত যাবতীয় চিন্তাভাবনাকে অনেক দূরে সরিয়ে রেখে এক নতুন আড্ডার ছবি এঁকেছেন। যেখানে হাতে লেখা চিঠি আছে, যেখানে আছে পোস্ট অফিসে গিয়ে বাড়িতে টেলিফোন করা আবার পার্টিতে অ্যালকোহল ও আছে, আছে বাবা মা-এর সাথে ও সম্মুখে অবিরাম নিকোটিন ও ধোঁয়া। 


তবে ছবির প্রধান চরিত্র শুতু (অভিনয়ে - Vikrant Massey) এসবের থেকে বেশ খানিকটা দূরে, তার মধ্যে একটা ছাড়াছাড়া ভাব। সে বইয়ের ভেতর মথ রাখে, সে বাড়ির সবথেকে ছোট সদস্য-এর সাথে কাটিয়ে দেয় সব থেকে বেশি সময়।


 চিন্তা, পরিশ্রম এই ম্যাক্লাক্সিগঞ্জের এই পরিবার গেট টুগেদারে ঢুকতে না পারলেও পিছু ছাড়েনা হতাশা। শহর থেকে অনেক দূরে এই মোহময় জঙ্গলের ভেতরেও শুতুকে হতাশা সবসময় তাড়া করে বেরায়, তাড়া করে বেরায় অপারকতা, ফেলিয়োর। শুতু আঘাত পায় নিজের থেকে, নিজের ভালোবাসা থেকে…পরিবারের বাকি সদস্যদের থেকে…পারিপার্শ্বিক থেকে…সে বারবার আঘাত পায়! তার পাশ করতে না পারা এম.এস.সি মার্কশীট সে ডায়েরিতে লুকিয়ে রাখলেও বের করে দেখে, পেন দিয়ে নকশা করতে থাকে সেই মার্কশিটের উপর। একটা ফেলিয়োর  থেকে সে পালিয়ে এইখানে ছুটি কাটাতে আসে, ভাবে হতাশা ফেলে রেখে ফিরে যাবে। কিন্তু ডিপ্রেশন এমন এক জিনিষ যা প্রত্যেক আঘাতে আঘাতে ফিরে আসে, তা রূপকথায় হোক কিংবা বাস্তবে। পুরো ছবি জুড়ে রিয়ালিসমের মাপকাঠি ঠিক কতটা বা বাস্তব কতটা আছে তা ভাবতে বসলে হয়না! পুরো ছবিটিই এক কবিতার মত, যার প্রত্যেক ভাঁজে গোপনীয়তা লুকিয়ে আছে… মোহময় রূপকথার মোড়কে আছে সাসপেন্স ও থ্রিল। ছবিটির নিজস্ব এক কাব্যিক ছন্দ আছে যা নিজের মত চলে, নিজের এক অন্য স্টাইল এস্টাব্লিশ করে।



ছবিটির শুরু যেখান থেকে হয়েছিল, ছবিটির সূত্র ধরে আমরা সেই সময়েই ফিরে যাই আবার। এই দিন সাতেকে বাদবাকি পৃথিবীতে আর কি ঘটে গেছে তার কোনো আভাস ছবিটিতে না পেলেও এই দিন সাতেক আগে ঘুরতে আসা পরিবারটি থেকে যে একটি প্রাণ কমে গেছে তারই গল্প বলে ‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’। প্রাণটি গাড়ির ব্যাক সিটে বসে ফেলে আসা রাস্তার দিকে তাকায়, যেন সে জীবনটা ফেলে চলা শুরু করেছে। ‘আ প্রডেথ ইন দ্য গঞ্জ’ এক নিষ্ঠুর কবিতার মতো যা একটি মৃত্যু দেখায় তবে বারবার বেশ কিছু মৃত্যুর কথা বলে চলে। সম্পূর্ণ ছবি জুড়েই মন খারাপ, এক হারিয়ে ফেলা! আসলে পৃথীবিতে প্রতিদিন যে আত্মহত্যারা চুপিসাড়ে সংখ্যায় বেড়ে চলে, তা আসলে আত্মহত্যা নাকি এক একটা খুন? যারা হেরে গিয়ে পালিয়ে গেল, তারা কি সত্যিই পালিয়ে গেল নাকি তাদের বের করে দেওয়া হল তাদের চৌহদ্দি থেকে, আঘাতের পর আঘাত এনে বুঝিয়ে দেওয়া হল এ স্থান তোমার নয়। আসলে যারা নিজেকে মেরে ফেলেছিল তারা কেউই ভীতু নয়, তারা কেউই পিঠ বাঁচিয়ে পালায়নি…তারা স্লিপিং পিল হাতে…বা সিলিং থেকে ঝুলে পড়ার আগে কিংবা বন্দুকের নলের সামনে শেষবার এটাই বলেছিল , এই মৃত্যুটাই শেষ আত্মহ্ত্যা…নিষ্ঠুরতার একটি নিঃশব্দ প্রতিবাদ। ‘আ ডেথ ইন দ্য গঞ্জ’- এও মৃত্যু বন্দুকের নলের সামনে এসে দাঁড়ায়, রক্তের লাল রঙ গাছের গা বেয়ে গড়িয়ে পড়তে থাকে, সেই লাল রঙ বরাবর নিচে নামতে নামতে একসময় মনে হয় এক দুঃখের কবিতা পড়ছি, যা্র শেষে একটি নিষ্ঠুর মৃত্যুর কথা লেখা আছে।



Friday, 4 August 2017

লিপস্টিক আন্ডার মাই বুর্খা : একটি ছোট্ট সতর্কবাণী

যখন প্রথম ছবিটির ট্রেলার রিলিস করে তখনই ঠিক করেছিলাম এই ছবিটি দেখতেই হবে আমি এবং আমার বন্ধুরা রীতিমত অপেক্ষা করতাম কবে ছবিটি দেখতে পাব? ইচ্ছে ছিল ছবিটি সবাই একসাথে দেখার, ছবির রিলিস ডেট অনেক পিছিয়েছে আমার এক বন্ধু এখন কলকাতা শহরের বাইরে, তাই আর একসাথে দেখা হয়ে ওঠেনি আমার এখনো ভালোই মনে পরে সেইদিনটার কথা যেদিন ওই নিউসটা পড়লাম, ‘লিপ্সটিক আন্ডার মায় বুর্খাছবিটিকে অবাস্তব, অশ্লীল বলে ইন্ডিয়ান সেন্সর বোর্ড ব্যান করে দেয় আমাদের পরীক্ষা ছিল সেই সময়, আমরা পড়াশোনা ফেলে কেন ব্যান করা হল?’ সেই নিয়ে রাগ মিশ্রিত একটা চর্চা করতে বসে গিয়েছিলাম এরপর আবার সেদিন খুব আনন্দ হয়েছিল যেদিন ফিল্মটির রিলিস-এর ডেট অ্যানাউন্স করা হয়, দিন গুনছিলাম কবে এই অবাস্তব’ ‘অশ্লীলছবিটি দেখতে পাবশেষমেশ যখন ছবিটি দেখতে পেলামমনে হল কিছু একটা হাসিল করে ফেলেছি! আমাদের রাষ্ট্রে কিন্তু এই একটা মজা আছে, সামান্য একটা ভালো ছবি দেখার জন্যেও এতটা স্ট্রাগেল করতে হয় যে তার আনন্দও দ্বিগুণ হয়ে ওঠে।

অলংকৃতা শ্রীভাস্তভ পরিচালিত ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুর্খা’ ফিল্মটি একটি সাধারণ ছকে বাঁধা। ভোপালের একটি ছোট্ট এলাকার চারজন মহিলার জীবনযাপনের নানাদিক এই ছবিটিতে উঠে এসেছে। ছবিটিতে নির্দিষ্ট কোনো গল্প নেই, আমাদের জীবনযাপনের নানা অংশ শ্যুট করে যদি দেখানো যায় তবে যেরকম হয় এক্ষেত্রেও ব্যপারটা অনেকটা ওইরকমই...চারজনের লাইফস্টাইলের একটা ধারণা আমরা ছবিটি দেখে করতে পারব।

তবে এই জীবনযাপন দেখানোর জন্য এমন চারটি জীবনই বাছা হয়েছে যাদের মুখের উপর জবাব দেওয়ার অধিকার ও সাহস কোনোটাই নেই, কিন্তু ইচ্ছে আছে ও চোখে স্বপ্ন আছে অপরিসীম। যে স্বপ্নগুলো যে আকাঙ্খাগুলো তারা সবার চোখের আড়ালে গিয়ে, লুকিয়ে পূরণ করে। ছবিটি শুরু হয় একটি শপিং মলের দৃশ্য দিয়ে, যেখানে একজন বোর্খা পরা মেয়ে লিপ্সটিক পছন্দ করছে, ভয়েস ওভারে একজন মহিলার কন্ঠস্বর শোনা যায়। যে ভয়েসওভারটি একজন রোসি নামে নির্দিষ্ট মেয়ের গল্প বলে, তার আকাঙ্খা...তার ভালো লাগা...তার শারীরিক চাহিদা...তার ফ্যান্টাসি এসবের কথা বলে। ফিল্মের মাঝেমাঝেই এই গল্পটি ভয়েস ওভারে ফিরে আসে, এই গল্পটিই ফিল্মটিকে একটি সুতোয় বেঁধে রাখে যা শেষ হয় ফিল্মটির শেষ দৃশ্যে। স্ক্রিনে বুয়া জি (অভিনয়ে – রত্না পাঠক ) এই গল্পটি একটি বই থেকে পড়ছেন দেখালেও আমার কোথাও গিয়ে মনে হয়েছে নির্দিষ্ট ওই গল্পটি রোসি নামে একজন মেয়ের গল্প নয়, আসলে ওই গল্পটি সব মেয়েরই...অন্তত তাদের যারা নিজের আকাঙ্খা, নিজের শারীরিক চাহিদা, নিজের ফ্যান্টাসিগুলোকে চাপা দিয়ে সামাজিক ও পারিবারিক চাপে পরে প্রতিদিন একজন তথাকথিত ‘ভালো মেয়ে’-এর অভিনয় করে চলেছে। কেউ ভালো মেয়ে, কেউ ভালো স্ত্রী এবং মা, কেউ ভালো গার্লফ্রেন্ড কেউ বা পরিবারের ভালো বয়ঃজেষ্ঠ মানুষটির ভূমিকায় অভিনয় করে চলেছেন আর আসল সত্ত্বাটিকে আড়াল করে রাখা হয়েছে একটা ভারি পর্দার আড়ালে। যে স্বত্তাটির অনেক রঙিন আকাঙ্খা আছে, যে ঠোঁটটির একটি রঙচঙে গাঢ় লিপস্টিকের আকাঙ্খা আছে। যে আকাঙ্খা কোনো বয়স মানেনা, কোনো বাধা মানেনা...যে কালো পর্দা সমাজ তাঁদের ইচ্ছেগুলোকে ঢাকতে তাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছিল সেই কালো পর্দাকে ব্যবহার করেই প্রতিনিয়ত নিজেদের ইচ্ছেগুলো পূরণ করে চলে।


 মিডএজ বুয়া জি নিজের পছন্দ মত গাঢ় লিপস্টিক লাগায় ঠোঁটে, রাতে ফোন সেক্স করে, নিজের শারীরিক ইচ্ছেগুলোকে প্রাধান্য দেয়।

রেহানা (অভিনয়ে -Plabita Borthakur) তার বোর্খার আড়ালে তার পছন্দ মত পোষাক পরে।


শিরিন (অভিনয়ে- কঙ্কনা সেনশর্মা) তার বোর্খার আড়াল থেকেই নজর রাখে তার স্বামীর ও স্বামীর প্রেমিকার উপর। শিরিন সিস্টেমের সেই মানুষগুলোকে রিপ্রেসেন্ট করে যারা তাদের বিয়ের পর প্রতি রাতে বিছানায় তাদের ইচ্ছের বিরূদ্ধে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হয় কিন্তু যেহেতু আমাদের রাষ্ট্রের চিন্তায় ম্যরেটিয়াল রেপ-এর কোনো অস্তিত্ব নেই তাই সেটাকে ঠিক ‘রেপ’ বলা যায়না।


কারণ রাষ্ট্রের কাছে সেটা খুব সাধারণ একটা ব্যপার। স্ক্রিনে দেখা যায় বারবার অ্যাবর্শন করাতে হয় কিন্তু তার স্বামী কন্ডোম ব্যবহার করতে চায়না। তাকে শাস্তি স্বরূপও তার স্বামী তার সাথে জোর করে সেক্স করে, মনে করিয়ে দেয় এই পরিবারের পুরুষ তার স্বামী...সে নয়! এটা খুব স্বাভাবিক একটা পুরুষতান্ত্রিক ভাবনা, আমি আবার বলব যে ‘পুরুষতন্ত্র’ শুধুমাত্র পুরুষকেন্দ্রিক নয়, এটা একটা সিস্টেম একটা ভাবনা যা ইকুয়ালিটির বিরোধিতা করে, নারীস্বাধীনতার বিরোধিতা করে। যা মনে করিয়ে দেয় তুমি একজন মেয়ে, তাই তুমি পুরুষের সমান নও...সমান হওয়ার চেষ্টা করলে বা তুমি যে সমান বা তার চাইতেও অনেক বেশি সেটা বুঝিয়ে দিলে তোমায় শাস্তি দেওয়ার অধিকার আমার আছে।
রেহানা তার কলেজ জীবন শুরু করেছে, তার চোখে অনেক স্বপ্ন! বড়ো সিংগার হওয়ার স্বপ্ন...বাদবাকি কোনো নিয়মই সে মানতে চায়না! নিজের ইচ্ছেগুলো পূরণ করার জন্য তার ভালো মেয়ে হয়ে ওঠা হয়না। লীলা( অভিনয়ে-   Aahana Kumra) ‌ চায় তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে সেটেল্ড হতে কিন্তু তার বাড়ি থেকে তাকে অন্য কোথাও বিয়ে দিতে চায়।

কিন্তু লীলা‌ পরিবারের বিরূদ্ধে গিয়ে নিজের স্বপ্নগুলো পূরণ করতে চায়, ওইদিকে তার বয়ফ্রেণ্ডও তাকে ভুল বোঝে, সবকিছু একসাথে সামলাতে গিয়ে তারও একজন ভালো গার্লফ্রেন্ড হয়ে ওঠা ওঠেনা! ছবির শেষে মনখারাপ হয়ে আসে যখন এক একটা স্বপ্ন সিস্টেমের পায়ের নিচে চাপা পড়ে যায়, বড়ো মন চায় দেখতে এরা প্রত্যেকে ফাইট ব্যাক করুক, সবক’টা স্বপ্ন পূরণ হতে দেখতে মন চায়...কিন্তু স্ক্রিনে তা ঘটতে দেখলেই সেটা বরং অবাস্তব হত...বাস্তব তো এটাই যেখানে এখনো ‘মেয়ে’ বলে অনেকগুলো স্বপ্ন অসম্পূর্ণ থেকে যায়, অনেক অন্যায়ের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়ানো হয়ে ওঠেনা। সেই রঙচঙে উগ্র আকাঙ্খাগুলো যা বোর্খার আড়ালে থেকেই আকাশ ছুঁতে চাইছিল তারা আকাশ ছুঁতে গিয়েও হঠাতই পরে যায় মাটিতে, এটাই বোধ হয় আসল সত্যি। কিন্তু ওরা চারজন সমস্ত সত্যিগুলো সব শাস্তিগুলোকে উপেক্ষা করে ওরা নিজেদের জীবনের এক মানে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে যেখানে সত্যিই কোনো ভয় নেই। রোসি নিজের জীবনকে হারিয়েও নতুন করে পেতে শুরু করে!


আমার এক অদ্ভুত পছন্দ আছে, যখন আমাকে ভালো মেয়ের বদলে বেহায়া মেয়ে বলে আমার শুনতে বেশি ভালো লাগে...মনে হয় কিছু একটা করে ফেলেছি নিশ্চই! তেমনই যখন পলহাজ নিহলানি ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুর্খা’ ছবিটিকে অবাস্তব, অশ্লীল বলে একাধারে করেছিল তখনই বোঝা উচিত ছিল ছবিটি এমন কিছু দেখিয়ে ফেলেছে যা দেখানো উচিত ছিলনা কখনোই। আমি সারা ছবিটিতে আতস কাঁচ লাগিয়েও কোনো অশ্লীলতা খুঁজে পাইনি এ আমার দুর্ভাগ্য বই কম কিছু না! ভীষণভাবে বোঝার চেষ্টা করছিলাম ছবিটি কোন জায়গায় অবাস্তব কিন্তু বিষয়টি যে একদম উল্টো! লিপস্টিক আন্ডার মাই বুর্খা ঠিক বাস্তবটা দেখায়, একটা নগ্ন রূঢ় সত্যি দেখায়...যা আড়াল করে রাখা বা ধামাচাপা দিয়ে রাখা ‘পুরুষতন্ত্র’-এর জন্য, রাষ্ট্রের জন্য খুব প্রয়োজন ছিল। ছবিটির সেভাবে প্রচার হয়নি, মাল্টিপ্লেক্স ছাড়া শহরের সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোয় ছবিটি আসেওনি, তার কারণ বোধ হয় সেখানে ‘অবাস্তব’ ছবি দেখানো হয়না! পলহজ নিহলানি এই ছবিটিকে যদি নারীকেন্দ্রিক বলে ব্যান করে থাকেন, তবে সারাবছর হিরো-কে ভগবানের মত রিপ্রেসেন্ট করা যে প্রচুর ছবি রিলিস করে সেগুলোকে ‘পুরুষকেন্দ্রিক’ বলে ব্যান করেন না কেন? আসলে সিস্টেম আমাদের অর্থাৎ মেয়েদের রঙচঙে উগ্র ইচ্ছের উপর যে মোটা কালো ভারি পর্দা চাপিয়ে দেয়, সেই পর্দাই যে আমাদের ইচ্ছেগুলো পূরণ করতে গোটা সিস্টেমের থেকে আমাদের আড়াল করতে পারে ‘লিপস্টিক আন্ডার মাই বুর্খা’ তারই একটা সতর্কবানী, হুম ছবিটি গোটা পুরুষতন্ত্রের বিরূদ্ধে শুধু একটা সতর্কবাণী!