HAPPY READING...


Friday, 15 December 2017

আমি, বিচ্ছেদ এবং কোমল গান্ধার

 “আপনি জানেন ওপারে না পূর্ব বাংলা, এটা পদ্মা; আমি আগে জানতাম না! ওপারেই কোথাও আমার দেশের বাড়ি, এখানকার আকাশটা ধোঁয়া না!” রেললাইনের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভৃগু ও অনুসূয়া। সামনে ব্যারিকেড তাদের সামনে পদ্মা... নদী দিয়ে নৌকা চলে যাচ্ছে। ওরা দু’জনে ওদের দেশের কথা ভাবছে, ভাবছে ফেলে আসা স্মৃতির কথা। “যখন তুমি বললে ওপারেই তোমার দেশের বাড়ি তখন আমি কি করছিলাম জানো? আমার বাড়িটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছিলাম!...যে রেললাইনটার উপর আমরা দাঁড়িয়েছিলাম কলকাতা থেকে ফেরার সময় ঠিক ওখানেই আমরা ট্রেন থেকে নামতাম।...ওখানে দাঁড়িয়ে একটা মজার কথা মনে এল, মনে হল ওই রেল লাইনটা তখন ছিল একটা যোগ চিহ্ন ,আর এখন কেমন যেন বিয়োগ চিহ্ন হয়ে যায় ওখানে যেন দেশটা কেটে দুটুকরো হয়ে গেছে”, ভৃগু বলল।


 দুজনের স্মৃতি যেন কেমন হাত ধরে হেঁটে যায়...আস্তে আস্তে হেঁটে ফিরে যায় ফেলে আসা সময়টায় যখন রেললাইনটা একটা যোগ চিহ্ন ছিল, যখন দেশটা কেটে দুটুকরো হয়ে যায়নি... নদীর ধারের গাছগুলো হঠাতই তীব্র ভাবে দুলতে শুরু করে। বাতাসের আওয়াজ, তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে ওঠে। ক্যামেরা ওয়াইড অ্যাঙ্গেলে এগিয়ে চলে রেললাইন ধরে (ট্র্যাক ইন করে)...এগিয়ে যায় ব্যারিকেডটার দিকে যার ওপারেই পদ্মা যে লাইনটা একটি ভূখন্ডের বিয়োগ চিহ্ন হয়ে গেছে। আবহে বহু কন্ঠে শোনা যায়, ‘দোহাই আলি!’ ক্যামেরা এগিয়ে চলে ব্যারিকেডের দিকে একসময় স্পেস ফুরিয়ে যায়...ব্যারিকেড দেশভাগ আর অন্ধকার মিলেমিশে এক হয়ে যায়, পর্দার রঙ কালো হয়ে যায়। 

কারণ ব্যারিকেডের ওপাশে যে পদ্মা, রেললাইনটি শেষ হয়ে গেলে একটা দেশ কিভাবে যেন দুটো দেশ হয়ে যায়। আর যারা চেয়েছিল এই বিচ্ছেদ যেন না ঘটে, যাদের পিঠ থেকে কাঁটাতারের দাগ ওঠেনি এখনো...তারা ভগবানকে প্রার্থনা করে, জানায় দোহাই ভগবান এই বিচ্ছেদ ঘটতে দিওনা। কারণ বিচ্ছেদের ওপাশ যে গাঢ় অন্ধকার যেখানে আর নিজেদের পরিচয়  খুঁজে পাওয়া যায়না। যেখানে দাঁড়িয়ে অনুসূয়া ভৃগুর দিকে তাকিয়ে বলে, “জানেন ওপারেই কোথাও আমার দেশের বাড়ি! এখানের আকাশটা ধোঁয়া নয়!”
অনুসূয়া ফার্দিনান্দের জন্য অপেক্ষা করে থাকে বহু বছর, যে ফার্দিনান্দ তাকে মিরান্ডা বলে ডাকত। ভৃগুকে জানায় সমরের কথা যে প্যারিসে থাকে, যার জন্য তার মিরাণ্ডা অপেক্ষা করে থাকে বছরের পর বছর। আর এদিকে তাকে ‘শকুন্তলা’ নাটকে অভিনয় করায় ভৃগু...শকুন্তলার চরিত্রে। এক রাত্রে ভৃগুর সাথে কথা কাটাকাটির পর অনুসূয়া বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরোয়, সে জানে এসব ছেড়ে তাকে সমরের কাছে চলে যেতে হতে পারে, সে সেই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একটি ছোট মেয়ে তার আঁচল টেনে ধরে , বলে ‘দিদি পয়সা দেনা!’ একজন লোক হঠাতই তার কাছে এসে টাকা চায়...দূরে গিয়ে বলে ‘ভৃগু আপনাকে ঠিকই চিনেছে, আপনাদের মত বাংলাদেশে আছে তাই আমরা আছি আপনারা থাকুন!” বাচ্ছা মেয়েটি ছুটতে থাকে অনুসূয়ার পিছু, নানা রকম শব্দ কানে আসে। মনে পরে বেশ কিছু সময় আগের একটি দৃশ্য যেখানে একটি ছোট্ট কেবিনে ভৃগু অনুসূয়াকে শকুন্তলার চরিত্রটি অনুভব করতে শেখাচ্ছিল...বলছিল মনে করোনা একটি বাচ্ছা মেয়ে যদি তোমার আঁচলটা টেনে ধরে, ধরে নাওনা সেই হরিণ শাবক। যদি এসব ছেড়ে তোমায় চলে যেতে হয় তোমার কিরম কষ্ট হবে! ভৃগুর বর্ণনা করা শকুন্তলার অনুভূতিরাই কেমন সত্য হয়ে ওঠে, অনুসূয়ার সাথে ঘটতে থাকে সেসব কিছু...যাবতীয় পিছুটান তাকে বেঁধে ফেলতে থাকে মনে করিয়ে দেয় সে যে তার অজান্তেই ভৃগুর শকুন্তলা হয়ে উঠেছে তার আর বিদেশ যাওয়া হবেনা। অনুসূয়া বাড়ি আসে, আবহে শোনা যায় বন্দুকের আওয়াজ যেন কাছেই কোথাও যুদ্ধ লেগেছে এক ভয়ানক যুদ্ধ। অনুসূয়া তার দাদাকে জানায় সে খুব বুঝতে পেরেছে সে ভৃগুকে ছাড়া বাঁচবেনা কিন্তু দৃশ্য অনুযায়ী কথাটি শোনা যায় সিঁড়ির উপর থেকে যেখানে অনুসূয়া সিঁড়ির নিচে বসে আছে। তার দাদা জানায়, “প্যারিস থেকে ফার্দিনান্দ নামে একটি ছেলে এসেছেন নাম বললেন সমর, উপরের ঘরে অপেক্ষা করছেন!” আবহে শোনা যায় কারা যেন আবার ‘দোহাই আলি’ বলছে। এরকম কখনো ঘটেনা, এক ব্যক্তির দুই নাম হয়না! তবু এই দৃশ্যে হয়। কারণ এই দৃশ্যে শকুন্তলাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয় তার শকুন্তলা হওয়া হবেনা...তার ফার্দিনান্দ তার জন্য অপেক্ষা করছে তাকে সব ফেলে শকুন্তলার সাজ ফেলে মিরাণ্ডার পোশাকে ফার্দিনান্দের সাথে বিদেশ চলে যেতে হবে! সিঁড়ির উপর থেকে ক্যামেরা আবার ট্র্যাক ইন করে সিঁড়ির নিচে বসে থাকা অনুসূয়ার দিকে নামতে থাকে, আবহে বাজতে থাকে দোহাই আলি! সিঁড়িগুলো কেমন যেন রেললাইনের মত মনে হয়...শব্দটা মাথার ভেতর আঘাত করে মনে করিয়ে দেয় রেললাইনের দৃশ্যটি। শুনতে পাই, “দোহাই আলি”...ক্যামেরা অনুসূয়ার কাছে পৌছায় তারপর আমরা অন্ধকারে হাতড়াতে থাকি একটা সম্পর্ককে, যার বিচ্ছেদ আমরা চাইনি! কিছুক্ষণ আগে শুনতে পাওয়া বন্দুকের শব্দ দেশভাগের সময়কার সেই যুদ্ধের কথা মনে করিয়ে দেয় , যে যুদ্ধের পরের পৃষ্ঠাতে বড় করে বিচ্ছেদ লেখা আছে। সিঁড়ি বেয়ে ক্যামেরা যখন নেমে আসে ভগবানকে প্রার্থণা করি আমরা যে এই বিচ্ছেদ ঘটতে দিওনা, এই বিচ্ছেদ মেনে নেওয়া যায়না। সিঁড়ির ওপরেই যে ফার্দিনান্দ অপেক্ষা করছে সিঁড়িটাও যে তাই কেমন বিয়োগ চিহ্ন হয়ে যায়। শকুন্তলা উপরে গেলেই যে তাকে মিরান্ডা হয়ে যেতে হবে। সিঁড়িতে তাদের বিচ্ছেদের কথা লেখা আছে।



 শুধুমাত্র শব্দের ব্যবহার করে, পরিচালক দুই বিচ্ছেদকে এক করে দেন। একটি দেশ একটি শরীরের মত যার মাঝখান দিয়ে একটা নদী বয়ে গেছে আর গেছে সারিসারি কাঁটাতার, আঘাত থেকে এখনো রক্তক্ষরণ হচ্ছে। স্মৃতিকে তো ছুঁইয়ে দেখা যায়না তাই ভৃগু অনুসূয়ার স্মৃতিতে আমরা হাত বুলাতে পারিনা নয়তো স্মৃতির রক্ত আমার হাতেও লাগত।  একইভাবে ভৃগু অনুসূয়া কখন যেন এক ও অভিন্ন মানুষ হয়ে গেছে, ওদের বিচ্ছেদও মেনে নেওয়া যায়না। শব্দের সেতু গড়ে পরিচালক বিচ্ছেদকে পাশাপাশি এনে রাখেন তারপর মিলিয়ে দেন, সেতুর ওপারে দুইটি দেশ দাঁড়িয়ে আছে আর এপারে দাঁড়িয়ে আছে দুটো মানুষ। ওদের মধ্যে অবাধ ভালোবাসা, টান! দুটো দেশ, একটা শরীর আর দুটো মানুষ...বিচ্ছেদ যে বিচ্ছেদই, তার নাম গোত্র পালটায় না।


আমাদের ক্লাসরুমের বাইরে একটা জানলা আছে, ভেতরে নেই...ভেতরে আছে শুধু শীতলতা। আমাদের সেই জানলার সামনে একটা বেঞ্চ রাখা আছে। যখন প্রথম প্রথম ইয়ুনিভার্সিটি যাওয়া শুরু করি ওই বেঞ্চ, ওই জানলা...জানলার ওপাশে বিকেলবেলা এসবই আমাদের কাছে যোগচিহ্ন ছিল। ক্লাস শেষ হতে হতে বিকেল হয়ে যেত, আজও বিকেল হয়ে যায়। জানলার সামনে এসে দাঁড়াই বা বেঞ্চে বসি... এগুলোই একদিন বিয়োগ চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। সামনে সিঁড়িটা নেমে গিয়েছিল অজানার দিকে, জানিনা সিঁড়ির নিচে কোনো শকুন্তলা অপেক্ষা করে ছিল কিনা। লেখাটার নাম “আমরা, বিচ্ছেদ ও কোমল গান্ধার” হতে পারত যদি সিঁড়ির নিচে অজানাটি জানা থাকত।



ছবি সৌজন্যে ঃ 'কোমল গান্ধার'

Saturday, 4 November 2017

ডুব - একটি অভিমানী কবিতা

আমাদের এক জানা গল্প আছে এক নাম না জানা লেখকের গল্পযিনি তার প্রিয় পরিবার ছেড়ে দূরে চলে যাচ্ছিলেন, পাল্টে যাচ্ছিল তাঁর বাঁচার কারণট্টাকিংবা বাঁচার কারণ ছিলনা আর কোনো তাই অজান্তেই একটা সেলের মধ্যে প্রবেশ করে আর বেরিয়ে আসতে পারেননি এবং তার সাথে অসময়েই দেখা হয়েছে মৃত্যুর! ‘ডুবছবিটিও সেই জানা গল্পটিই বলে পরিচালক আশা করেন কিংবা ধরেই নেন দর্শকের ছবির ন্যারেটিভটি জানা একই ঘটনা যখন আমরা প্রত্যেকে দেখি বা প্রত্যেকে শুনি তার সাথে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিটুকু জুড়ে নিই ডুবছবিটিতে পরিচালক শুধু চেনা ন্যারেটিভটি দেখার একটা প্রাসপেক্টিভ তৈরি করে হুম, যে দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখার কথা কেউ ভাবেনি সামাজিক বাঁধাধরা নিয়মে যা খারাপ যা দৃষ্টিকটু তাকেই স্ক্রিনে ডুবএমনভাবে প্রতিস্থাপন করে যা চোখকে শান্তি দেয়, এক ঘনিষ্টতার অভিজ্ঞতা তৈরি হয় আমাদের


ডুবসিনেমার মূল চরিত্র একজন ছবি পরিচালক জাভেদ হাসান(অভিনয়ে ইরফান খান) সারা ছবি জুড়ে তাঁর খ্যাতি নিয়ে আমাদের আলাপ হয়না আমরা ওঠাবসা করি শুধু মানুষটির সাথে ঢাকা শহরের মতো একটি ব্যস্ত শহরেও ছবির কোনো ফ্রেমে সেই ব্যস্ততাকে দেখতে পাইনা যা পাই তা হলো কতগুলো মানুষ বা চরিত্র যারা একগাদা অনুভূতিদের বয়ে বেড়াচ্ছেএকটি ফ্রেম থেকে আরো একটি ফ্রেমে নিজের উপস্থিতিতে পৌঁছে দিচ্ছে অনুভূতি ছবির শুরুতেই দেখা যায় একটি সমুদ্রতট, যেখানে একের পর এক ঢেউ আসছে আর সমুদ্রতটে এক নৌকা বাঁধা হয়তো এই দৃশ্যটিতেই সমস্ত ছবির কথা বলা আছেএরপর থেকেই ছবিটি নিজের এক একটি ভাঁজ উন্মুক্ত করেএকটু একটু করে বিস্তার করে দেয় শাখা প্রশাখা যা শহরের ভিড় পেরিয়ে একদম আমাদের মনে এসে পৌঁছায় কলেজের রিইউনিনে দেখা হয় নিতু( অভিনয়ে – পার্ণ মিত্র) এবং সাবেরীরতবু দুজনের মধ্যে একটা দেওয়াল একটা দূরত্ব যা পেরিয়ে একে অপরের কাছে আসা যায়না, ফিরে যাওয়া যায়না ছোটবেলায় যেখানে ওরা নিজেদের মনের কথাগুলো অকপটেই বলে ফেলতে পারত
জাভেদ হাসান তাঁর স্ত্রী-এর সাথে কাটানো পুরোনো মূহুর্তগুলোকে মিস করেন পাহাড়ে ঘুরতে এসে স্ত্রীর সাথে স্মৃতিচারণ করেন যে সময়ে তারা ভালোবাসার জার্নিটা শুরু করেছিলেন সবে। তিনি তার হাতের ঘড়িটি খুলে চুপচাপ নদীর জলে ফেলে দেন যাতে স্ত্রী-এর সাথে কাটানো মুহূর্তকে মিনিটে বা ঘণ্টায় হিসেব না করা যায়, যাতে সেই সময়টাই শেষ না হয় কখনো।


ছবিতে সংলাপের ব্যবহার খুব কমঅনুভূতিরা নিজেদের প্রকাশ করতে কোনো শব্দের ব্যবহার করেনা সংলাপ নয় নিস্তব্ধতাই বুঝিয়ে দেয় কলেজ রিইউনিয়নে দেখা হওয়া দুই বন্ধুর দূরত্বের কারণ।  ‘ডুব’-এর এক একটি ফ্রেম কবিতার এক একটি লাইনের মত। ক্যামেরার ধীর চলন , লং টেক একটা মন্থর ছন্দের তৈরি করে যার অন্তমিল নেই। লং টেক যেন এক জীবনের উপর দীর্ঘ সময় ধরে পর্যবেক্ষন করার মত। কারণ প্রত্যেক দৃশ্য-এর প্রত্যেকটা এলিমেন্টই কবিতার সেই লাইনের এক এক শব্দ। পর্দার রঙ, আলোর ইন্টেন্সিটি, রাস্তাঘাট সবকিছুই খুব সন্তর্পণে সাজানো কারণ পরিচালক বিশ্বাস করেন একটু এধার ওধার হলেই একাকিত্ব-এর অর্থটা পাল্টে যাবে।


 ‘ডুব’- এ  সম্পর্করা আছে, আছে ভালোবাসা আর পিছুটান, তাই পরিবার ছেড়ে বেরিয়ে এসে নিতুর সাথে বিবাহিত জীবন শুরু করার পর ও জাভেদ হাসান হঠাত একদিন রাত্রিরে তার একমাত্র মেয়েকে ফোন করে তাঁর মুখ থেকে বাবা ডাকটা একবারের জন্য শুনতে চান। সম্পর্ক কখনো শেষ হয়ে যায়না বলেই হাজারো অভিমানের টানাপোড়েনের ওপাশে মেয়ে তার বাবার কফিন জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে তার বাবাকে জানায় সে তার বাবাকে ভালোবাসে।

বাস্তবে জীবন কতটা কাব্যিক হয় জানিনা, কিন্তু ‘ডুব’-এর প্রত্যেক চরিত্রের চলন বলন ভীষণ কাব্যিক। বাবার মৃত্যু খবর পেয়ে সাবেরী বাথটাবে শুয়ে থাকে , খোলা থাকে জলের কল...সেই জল উপছে সিঁড়ি বেয়ে নিচে গড়িয়ে আসে। একটি ফ্রেমকে যদি বর্ণনা করা হয় মনে হবে কবিতার একটি লাইন পেয়েছি। যেমন--- মাঝে দূরে এক কংক্রিটের বাড়ি আর ফোর গ্রাউন্ডে দুধারে গাছ। সময়ের গতিকে বারবার ভেঙে দিয়ে একটি সাধারণ ন্যারেটিভকে অন্যমাত্রা দেওয়া হয়। শুধুমাত্র সময় এবং পরিসরের ব্যবহার করে ক্যামেরার ধীর মুভমেন্ট দ্বারা যে কবিতা লেখা যায়, তাই প্রমাণ করে ‘ডুব’। বিশ্বাস করা হয় মৃত্যুর পর মানুষ সব নিয়মের উর্দ্ধে চলে যায়। যখন সবাই তাঁর মৃতদেহ আঁকড়ে পরে আছে তখন তিনি সব ভিড় কাটিয়ে তার স্ত্রী-এর সাথে সময় কাটাচ্ছেন নিভৃতে আর সময়ের এখন সত্যিই শেষ নেই। অন্যান্যরা যখন জাঁকজমকে গা ভাসিয়েছে, সেই সময় ডুব সমুদ্রের ধারে বসে একটার পর একটা ঢেউ গোনে। ঝিমধরা আলো, ধীর ক্যামেরামুভমেন্ট অনুভূতিদের গল্প লেখে...
 এক একটি ঢেউ কাছে আসে আর জানিয়ে যায় সম্পর্কের কখনো শেষ হইয়না, ফুরিয়ে যায়না ভালোবাসাও। সিস্টেমের বাঁধা ধরা নিয়মের জালে পরে নিঃশ্বাস নিতে ভুলে যায় শুধু, অসময়েই তাদের সাথে মৃত্যুর দেখা হয়। আবার ও ঢেউ দূরে চলে যায়, ছবির শেষে সমুদ্র তটে তখন ও বাঁধা থাকে সেই নৌকাটি যে সব অনুভূতির সাক্ষী, যে প্রত্যেকটা ঢেউয়ের সাক্ষী...যে একটি মানুষের হারিয়ে যাওয়ার বা ‘ডুব’-এর সাক্ষী!




Sunday, 22 October 2017

আমি এবং আমার "কালীমন্ত"রা

এমনিতে কালীপুজোর পরের সন্ধেবেলাটা ফাঁকা থাকিনা, পাড়ার ফাংশানটা নিয়ে ব্যস্ত থাকি অন্যান্য বছর। ছোটবেলায় সারারাত হৈ হুল্লোড় করতাম। বড়ো হওয়ার সাথে সাথে যদিও সেই হৈ হুল্লোড়ের ইমেজটা কিছুটা পালটে গেছে কিন্তু হৈ হুল্লোড় করাটা বন্ধ হয়ে যায়নি মোটেই। এক এক বছর কালীপুজো আসে, সময়গুলো পাল্টে যায় কেমন...পাল্টে যায় সম্পর্কগুলোও। না! মন খারাপ করছিনা। সবার যেমন মন খারাপ হয় আমার কথায় কথায় হয় পেট খারাপ। আজ পেটটাও খারাপ না, তবুও কেমন যেন বিজয়া দশমীর মত ভারী হয়ে আছে মনটা। বৃষ্টি হয়ে সবটা ম্যাচাকার করে দিয়েছে। আমাদের প্ল্যান, আড্ডা সব! কাল থেকেই প্যান্ডেলের ভেতর জল, ‘আলপনা’ তো ‘জলপনা’ হয়ে গেছে...১০৮টা প্রদীপ দেওয়ার সময়, ‘না-কাদা’ জায়গাটাই আতশ কাচ লাগিয়ে খুঁজতে বসতে হয়েছে আমাদের।


নিজের ব্যক্তিগত মন খারাপ নিয়ে লেখাটা লিখতে বসিনি, লেখাটা এমনিই লিখে ফেলছি, লিখতে ভাল লাগছে তাই। লেখাটা একটা চিঠির মত হতে পারত, আদিকে মেল করে দিতে পারতাম অনায়াসেই...কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ওর থেকে চিঠির উত্তর না পাওয়ায় আমি ওকে চিঠি লেখা বন্ধ করে দিয়েছি। তবে ও যেমন বলে ওর সব লেখাই নাকি আমার, আমার ক্ষেত্রেও ব্যপারটা ঠিক সেরকমই!
 কালীপুজোকে আমার যতটা কোনো দেবতার পুজো মনে হয় তার থেকেও মনে হয় আমরা আলোকে সেলিব্রেট করছি। আনন্দ করছি আলোদের নিয়ে, রাস্তার সামনের বাঁকটা থেকে ঘরের কোণগুলো পর্যন্ত আলোয় মুড়িয়ে রাখিআলোও কত রকমের হয় তাইনা? সাদা, নীল, লাল, সবুজ....রঙ বেরঙের আলো! আমাদের কাছে আনন্দ করার, সেলিব্রেট করার বিষয় এত কম...তাই ছোট ছোট এই আনন্দগুলোও বৃষ্টির কারণে নষ্ট হয়ে যেতে বসলে খারাপ লাগেদুর্গাপুজোয় বছর তিন চার ধরে বৃষ্টি হতে হতে যেমন ওটা অভ্যেস হয়ে গেছে, কালীপুজোর ক্ষেত্রে এই বৃষ্টি ব্যপারটা যেহেতু নতুন,তাই পুজোর জায়গায় জমা জলটা ঠিক হজম করে উঠতে সময় লেগেছেযাই হয়ে যাক, আনন্দ যে কোনো ভাবে হাতছাড়া করা যাবেনা তা বাজির বহরই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছেবন্ধ জানলার ভেতর থেকে যেমন বৃষ্টির শব্দ আসছে সেসব ছাপিয়ে আসছে তীব্র বাজির শব্দআমার এই দুই শব্দই ভালো লাগছে, কিন্তু মন ভালো লাগছেনা

আমাদের এখানে প্রত্যেকটা বাড়ি বেশ আলো দিয়ে সাজানো হয়েছে, আমি আর বাবা কালিপুজোর আগের দিন অন্ধকারে হাতড়ে হাতড়ে ছাদ থেকে নীল, সাদা আলো ঝুলিয়ে দিয়েছি! ঠাম্মাকে বলছি, দেখেছ ঠাম্মা সব বাড়িতে আলো লাগিয়েছে কিন্তু ওই যে ওই বাড়িটায় আলো লাগানো না কিন্তু! এটা কি ঠিক? দীপাবলির সকাল চলে এলো, তবুও ওই দোতলা বাড়ির গা বেয়ে আলো নামলোনাআমি শুধু ভাবছি কেন আলো জ্বলবেনা ও বাড়ি, ঠাম্মা বলল দেখ বাড়ির ওপাশে আলো জ্বলবে হয়তো! দীপাবলির সন্ধে পরে, তাও ওদের বাড়ি আলো জ্বলেনাআমি তখন হাওয়ার সাথে যুদ্ধ করে মোমবাতি লাগানোর বৃথা চেষ্টা করছি দেখলাম ওই দোতলা বাড়ির ছাদে রং মশাল জ্বলে উঠলহেসে উঠল ও বাড়ির ক্ষুদে সদস্যদুটিমা, বাবা, দাদু, ঠাম্মাকে নিয়ে ফুলঝুরি, তুবড়ি, রঙ মশালে মেতে উঠল ওরাআমি ছাদ থেকে দাঁড়িয়ে শুধু হাসির শব্দ শুনছি আর আলোর মহরত দেখছিওরা এখানকার তথাকথিত বাকি পরিবারগুলোর মত না, 'না হিন্দু' পরিবার একটিআলোর ওই সন্ধেয় আমাদের এক তলার ছাদ আর ওদের দোতলার ছাদে কোনো পার্থক্য ছিলনাকোনো ভেদাভেদ ও না...কারণ সত্যিই আলো সবার, উতসব আনন্দ ও সবার...সেখানে কোনো ভেদ হয়না, সত্যিই না!
আমি বাজি ফাটাইনা, কিন্তু ছাদে দাঁড়িয়ে চুপচাপ আকাশে ফানুস উড়ে যেতে দেখিছোটবেলার কথা চিন্তা করিমা, বাবার কাছে গল্প শুনতাম, চামুন্ডা কালিরদুর্গাপুর ব্রিজের নিচে ঠাকুর ওঠে, সে নাকি ভয়ানক দেখতে...জিভ নড়ে, পেটের ভেতর নাড়িভুড়ি এধার ওধার করে নাকি, বিশাল চেহারার ওই কালি ঠাকুরকে দেখে বাচ্ছারা ভয় পায় খুবআমিও যখন ছোট বেলায় শুনতাম আমার খুব ভয় লাগত, কালীমূর্তিই এমন... তা যতই জাঁকজমকপূর্ণভাবে করা হোক না কেন, কালীমূর্তির ওই লাল লাল চোখ আর গলায় মুন্ডমালা দেখে পেটের ভেতর গুলুগুলু করে ওঠে ছোটদেরবড়ো হওয়ার সাথে সাথে নিজের ভাবনার পরিবর্তন হয়, দৃষ্টিভঙ্গি পালটায়মতামত তৈরি হয় নিজেরআমার এই লেখার পরবর্তী ক'টা লাইন সম্পূর্ণ আমার নিছক কল্পনা, নিজের চিন্তা... কোনো ধর্মীয় গল্পকথা এর সাথে জড়িত নয়যত বড় হয়েছি দেখেছি, আমাদের সিস্টেমে মেয়েদের নিয়ে কিছু ধারণা তৈরি করা আছেছেলেদের নিয়েও আছে বৈকিকিছু কাজ দুর্বল ও কিছু কাজ সবল এই দুটো ভাগে ভাগ করা আছেযে কাজ গুলো করলে দুর্বল প্রমাণ হয়, সে কাজগুলো কখনো কোনো ছেলে করতে পারেনা আবার যে কাজ গুলি করলে সবল প্রমাণ হয়...সে কাজ গুলো একটি মেয়েরে পক্ষে করা বড়োই দৃষ্টিকটু"ছেলে হয়ে চোখের জল ফেলে, সে ছেলে মাগীর অধম",  এমন মন্তব্য করতে শুনেছিলাম কাকে বেশআসলে মনে আছে কার থেকে শুনেছিলাম, কিন্তু এরম অপ্রিয় নাম মনে পরলে গায়ের ভেতর কেমন গুলিয়ে ওঠে বমি পায়আসলে মাগী কথাটা কোনো খারাপ শব্দ নয়, প্রত্যন্ত গ্রাম-এ মাগী অর্থাৎ মেয়েমানুষ কথার প্রচলন আছে, একই সাতে প্রচলন আছে 'মদ্দা' কথাটির ওমদ্দা বা মরদকিন্তু মাগী কথাটা প্রত্যন্ত গ্রাম ছেড়ে ট্রেনে বাসে যখন শহর বা শহরতলির আনাচে কানাচে এসে পোউছায় তখন সে কথাটির অর্থ হয়ে যায় অন্যএকটু মজা করলাম! আমাদের আশেপাশে 'হাতে চুড়ি পরে থাক!' 'ঘোমটা দিয়ে থাক' এই ধরণের কথার বেশ আদান প্রদান আছে, এমন কি এখনো! এই ধরণের কথাগুলি দুর্বল বোঝাতে ব্যবহার করা হয়সাধারণত যেসব কাজগুলি বা যা একটি মেয়েকেন্দ্রিক সবই দুর্বলচুড়ি পরা, পিরিয়ড চলা, ব্রা পরা...এসব ইআমাদের পিতৃতান্ত্রিকতায় এসব বিষয়গুলোই বড়ো নিচু করে দেখানো হয়মেয়েরা কাঁদে খুব স্বাভাবিক...কিন্তু ছেলেরা যেহেতু মানুষ নয় তাই তাদের কোনো ভাবেই ব্যথা যন্ত্রণা হতে পারেনা'মর্দ কো দর্দ নেই হোতা!' বাহ! বাহ! টাকা উসুল, হাউসফুলপিতৃতান্ত্রিক-এ পুরুষ আর দেবতার মধ্যে পার্থক্য করতে না পারা গেলেও আমাদের কিছু মহিলা দেবীও আছেনযার মধ্যে ভীষণ বিখ্যাত হলেন, লক্ষী দেবী'শুনলাম তোমার ছেলের জন্যে মেয়ে খুঁজছো? এক লক্ষীমন্ত মেয়ে আছে, দেখবে নাকি?' হাহা! সবাই লক্ষীমন্ত মেয়ে চায়, কিন্তু কেউ কালীমন্ত মেয়ে চায় কি? বোধ হয় না, অন্তত আমার চোখে পড়েনি। 

মেয়েরা দুর্গার ভাগ, লক্ষীর ভাগ এসব বড় বড় কথা অনেক শুনি...কিন্তু সত্যিই যিনি নিয়ম ভেঙে বেরিয়ে আসেন তিনি কালীইমোটামুটি যা যা একটি মেয়ের আমাদের সিস্টেমে করা নিষেধ তিনি সেসব করেনতিনি নিজের শরীরের 'লজ্জার অঙ্গ' গুলো ঢেকে রাখেন নাসম্পূর্ণ অনাবৃত শরীরই কালীর ইচ্ছে বা পছন্দক্লিভেজ দেখানো পোশাক, বেশি গা দেখানো পোশাক এসবের চিন্তাভাবনা গুলোকে অনেক পিছনে ফেলেসমস্ত নিয়মকানুনে ইয়ে করে দিয়ে সম্পূর্ণ নগ্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে তিনি একদমই কুন্ঠা বোধ করেন নাকালীপুজোয় শুনেছি গাঁজা, মদ এসমস্ত অর্পণ করতে হয়কারা বেশ বলেনা, মেয়ে হয়ে নেশা করে? তাদের ওই চিন্তাভাবনাগুলোকেও গাধার ইয়েতে দিয়ে দিব্ব মদের নেশায় মেতে থাকতে পারেন তিনিজোরে হাসেন, জোরে চিৎকার করেননিজের চুলকে ইচ্ছে মত উড়তে দেনখাঁড়া টাড়া হাতে নিয়ে শয়তানদের কাটতে কাটতে দিব্ব এগিয়ে আসেন তিনিনা তিনি তার গায়ের রঙের পরোয়া করেন না পরোয়া করেন মানুষের ভাবনারচুড়ি, শাড়ি, ব্রা...এসবের আশপাশ দিয়ে যান নাসম্পুর্ণ নিজের মত, নিজের ছন্দে চলেনঅর্থাৎ যেসব কাজগুলো একটি পিতৃতন্ত্র এক মেয়ের করা উচিত বলে ঠিক করে দিয়েছিল সেসবের পরোয়া না করেই তার উল্টো রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করেন কালীবলেন, তিনিই সৃষ্টি...তিনিই ধ্বংসআমদের হিন্দুবিশ্বাসে, ভগবান শিব হলেন জগতের পিতা, তিনি সর্ব শক্তিমানএতটাই শক্তিমান, এতটাই ক্ষমতা রাখেন যে শুধু তাকেই নয়...'শিব লিঙ্গ' কেও দুধ গঙ্গাজল দিয়ে স্নান করানোর নিয়ম প্রচলিত আছে আমাদের সমাজেএসব কিছুই না, পুরুষত্বের আরাধনাপিতৃতান্ত্রিকের শক্তি বুঝিয়ে দেওয়ার একটা প্রচেষ্টা মাত্রআর এদিকে যখন আমরা কালীমূর্তির কথা চিন্তা করি, দেখি পৃথিবীর সর্ব শক্তিমান পুরুষের বুকের উপর পা দিয়ে লকলকে জিভ বের করে তিনি সশরীরে দাঁড়িয়ে আছেনব্যপারটা সহজ ভাবে দেখতে গেলে, সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষের বুকের উপর পা তুলে যে দাঁড়িয়ে থাকে সেই সবথেকে শক্তিশালী হয়ে ওঠে, কিন্তু আমাদের সমাজে সবাই তা মেনে নেবে কেন? কালী যতই হোক একজন মেয়েতাই এরপেছেনেও এক গল্প কথা চালিয়ে দেওয়া হয়, কালীকে শান্ত করার জন্য এই গোটা বিশ্ব সংসারকে বাঁচানোর জন্য কিভাবে ভগবান শিব কালীর পায়ের নিচে শুয়ে পরলেন আর কালীও সেই লজ্জায় জিভ বার করে ফেললেন! এসব গল্প শুনতে শুনতে বড় হয়েছি, চুইনগাম চিবোতে চিবোতে যেমন তেতো হয়ে যায় এসব গল্প কথাও তেমনআমার মনে হয়, কালীমন্ত মেয়ের বড়ো প্রয়োজনলক্ষীদেবী বড় শান্ত, নারায়ণের সেবা করে তার দিন পার হয়ে যায়এসব কন্সেপ্ট আর চলবেনা! এখন ঘরে ঘরে কালীমন্ত মেয়েরা বড়ো হয়ে উঠুকযারা নিজেদের শরীরের অংশগুলো ঢাকার কথা ভাবেনাকোনো খারাপ নজর বা কটুক্তির জবাবে এলোচুলে খাঁড়া হাতে দৌড়ে যায়রাগে অস্থির হয়ে কেটে ফেলে এক একটা শয়তানের মাথাইচ্ছেমত নেশা করে, না কাউকে পাল্লা দিয়ে নয়( এরম এক ভুল ধারণাও প্রচলিত আছে, যে মেয়েরা নাকি ছেলেদের পাল্লা দেওয়ার জন্য নেশা ভাং করছে) নিজের মন মত নেশা করেআর লিঙ্গভেদ ছাপিয়ে লিঙ্গপুজোকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিয়ে... পিতৃতান্ত্রিকের বুকে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে




কোনো কাজ না থাকলে অনেক চিন্তা মাথায় আসে, বেকার বা 'না বেকার'...সেসব চিন্তাদের লিখে ফেলিকালীপুজোয় কালীদেবীর কথা চিন্তা করি, ওনার ক্ষমতা ওনার শক্তির কথা চিন্তা করিডেস্কটপে ওয়ালপেপার পালটিয়ে এক রুদ্র উগ্র কালীর ছবি রাখলামসম্পূর্ণ ঘর অন্ধকারশুধু জানলা দিয়ে বিদ্যুতের আলো মাঝে মাঝে ঘরে এসে পড়ছে, আমার ভয় লাগছে বেশ ছোটবেলার মতইমনে হচ্ছে, হঠাতই একদিন ঘুম থেকে উঠে শুনব কার কাটা মুন্ডু রাস্তার ধারে পাওয়া গেছেভিড় জমে আছে ওখানে, একটি মেয়ে এগিয়ে আসছে ভিড়ের ভেতর থেকে...মুন্ডুটা শনাক্ত করে বলছে এই তো সেই ছেলেটাই যে ওকে...বলে মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠছেএক এক মুন্ডু কাটার খবর পেয়ে ভয় পাচ্ছে তারাও যারা স্লোগান দিয়েছিল, 'না দুর্গা না কালী...আব রহেঙ্গে বজরংবলী'।  ভাবতে ভয় লাগছে আমার, আমি ডেস্কটপের ওয়ালপেপারের দিকে তাকিয়ে আছিমনে হচ্ছে এখনই ছবিটা সত্যি হয়ে উঠবেবাড়ি থেকে বেরিয়ে পরবে কালীমন্তরা, হয়তো আমিওমনে পড়ছে, পুজোর সময় একটি অটোর পেছনে লেখা দেখেছিলাম, ' বন্দে পুরুষোত্তম'বৃষ্টি পরছিল ভীষণ, আমার ও নেশা চোখে অটোর কাঁচ টাকে পাব্লিক টয়লেটের দেওয়াল মনে হচ্ছিল...যার গায়ে ওই লেখাটার উপর প্রস্রাবের ফোঁটা আর নোংরা লেগে আছে